রাজস্ব আয়ের লক্ষে মোংলা বন্দরে ১৩২টি বিলাস বহুল রিকন্ডিশন গাড়ী নিলাম
- আপডেট সময় : ০৭:১৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২ ২৮১ বার পড়া হয়েছে
মোংলা সমুদ্র বন্দরের জেটি এলাকার ইয়ার্ড ও শেডে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৩২টি রিকন্ডিশন গাড়ী নিলামে তুলছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
করোনার প্রভাবের কারনে আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের কোম্পানীরা সময় মতো গাড়ী খালাস করে না নেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ২হাজার ৮শ ৮৪টি গাড়ী নিলামের অপেক্ষায় বন্দরের ইয়ার্ড ও শেডে পড়েছিল নিলামের অপেক্ষায়। তাই বন্দরে গাড়ী রাখার জায়গা খালি ও শুল্ক জটিলতা দূর করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষে মঙ্গলবার মোংলা কাস্টম হাউজ এ নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।
মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা যায়, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা রিকন্ডিশন গাড়ী মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস করে তা জেটির ইয়ার্ড ও শেডে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। যা বিভিন্ন সময় এ বন্দরের জেটি থেকে খালাস করে আমদানী কারক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যায় তাদের লোকজন। কিন্ত আমদানি করা এসব গাড়িগুলো কোম্পানীরা ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর জেটি থেকে ছাড় করানোর নিয়ম থাকলেও আমদানীকারকরা তা করেননি প্রায় ৬মাস থেকে এক বছরেরও অধিক সময় ধরে গাড়ী না নেয়ার ফলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিয়োমানুযায়ী মঙ্গলবার গাড়ীগুলো বিক্রির জন্য নিলামে তুলছে।
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘদিন এ নিলাম প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় ২ হাজার ৮শ ৮৪টি গাড়ী শুল্ক জটিলতার কারনে নিলামের অপেক্ষায় বন্দরের ইয়ার্ড ও শেডে পরে ছিল। যার কারনে নতুন আমদানী করা গাড়ী রাখার জন্য জায়গা জটিলতায় বন্দরের জেটিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। শুল্ক ও আইনী জটিলতা শেষে ২ হাজার ৮৮৪টি গাড়ী থেকে ১৩২টি গাড়ী নিলামের জন্য গত ৭ জানুয়ারী দরপত্র আহবান করে মোংলা কাষ্টমস হাউজ। এর গাড়ীগুলোর মধ্যে রয়েছে হাইয়েস, নোহা, প্রাডো, নিশান পেট্রল, জাম ট্রাকসহ অন্যান্য দামী ব্রান্ডের ১৩২টি গাড়ী। গাড়ী নিলামের মোট ১৩৭টি লটের অনুকুলে ৪০টি দরপত্র বিক্রি হয়েছে যা ১৬ জানুয়ারী জমা দেয়া হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সিডিউল বক্সে।
১৮ জানুয়ারী মঙ্গলবার সকাল ১০টার সময় সকল অংশ গ্রহনকারীদের সামনে ১৩২টি বিলাশবহুল গাড়ী নিলামের সিডিউল উম্মুক্ত করা হয়েছে। এখন সর্বচ্চ দরদাতাকে তাদের নিলামে ক্রয় করা গাড়ী পরবর্তীতে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তারা মোঃ আবু বাসার সিদ্দিক।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, দীর্ঘদিন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরে আমদানীকৃত গাড়ী খালাস ও নিলাম না দেয়ায় জেটি এলাকায় গাড়ীর জট বা পন্য রাখার সমস্যা তৈরী হয়। তবে নিলাম প্রক্রিয়া চালু রাখলে গাড়ী বা অন্যান্য পন্য রাখতে ব্যাবসায়ীদের সুবিধাও হবে অন্যদিকে সঠিক সময় সরকারের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালের ৩ জুন ২৫৫টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির মধ্য দিয়ে এ বন্দরে গাড়ির কার্যক্রম শুরু হয়। হক্স-বে অটোমোবাইল কোম্পানি প্রথম এই মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানি করেন। সেই থেকে এই চলতি মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৪৬ হাজার ১শ ৬৩টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে এই বন্দরে তা খালাস করে রাখা হয়েছে। আমদানী করা এসকল গাড়ীর মধ্য থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৭৯টি গাড়ি কোম্পানী নিজেস্বভাবে বিক্রি ও শুল্ক জটিলতার কারনে বিভিন্ন সময় নিলামের মধ্যে দিয়ে খালাস করা হয়েছে। আর বর্তমানে কাগজ পত্র ও শুল্ক জটিলতার ও রাজস্ব সমস্যার কারনে বন্দর জেটির ইয়ার্ড ও শেডে ২ হাজার ৮শ ৮৪ টি গাড়ি রয়েছে যা পর্যাক্রমে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে বরেও জানান তিনি।
মোংলা কাস্টমস হাউজ’র ডেপুটি কমিশনার মোঃ মেহবুব হক বলেন, করোনা মহামারীর কারনে কিছুটা বিলম্ভ হলেও তার মধ্যেও আমরা নিলাম প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। গাড়ী থেকেই আমাদের ৬০ ভাগ রাজস্ব পেয়ে থাকি। তাই মোংলা কাস্টমস হাউজের রাজস্ব ক্ষাতে গতিশীলতা আনতে এখন থেকে প্রতি মাসেই দুইটি করে নিলাম প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবো। তাই এ মাসে ১/২০২২ নামের নিলাম সেল সমাপ্ত করা হলো, ১৩৭টি লটের বিপরীতে ৪০টি বিট পরেছে। এখন নিয়োমানুযায়ী এ বিটগুলো যাচাই-বাছাই করে যারা সর্বচ্চ দরদাতা হবে তাদের নামের তালিকা কাস্টমস’র কার্যলয়ে টানিয়ে দেয়া হবে। এর পরে নিলাম কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত করে যে গাড়ীগুলো নিলাম দরের সমমান বা আইনানুযায়ী ৬০% কভার করে অথবা নিয়োম-কানুনের মধ্যে দেয়া যায় সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে। এ নিলাম প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে এবং আমদানী কারক প্রতিষ্ঠান যদি সময় মতো গাড়ীগুলো খালাস করিয়ে নেয় তাহলে রাজস্ব আদায় হবে এবং রাজস্ব প্রবিদ্ধও বৃদ্ধি পাবে বলে জানায় কাস্টমস’র এ কর্মকর্তা।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৩ জুন হক্স-বে অটোমোবাইল কোম্পানি প্রথম ২৫৫টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির মধ্য দিয়ে মোংলা সমুদ্র বন্দরে গাড়ি খালাস ও মজুদ রাখার কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময়য়ের পর থেকে আমদানীকৃত গাড়ীর অনুকুলে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করে থাকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।