এখন আর শোনা যায় না বাদুড়ের চিঁ চিঁ শব্দ
- আপডেট সময় : ১২:৩২:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে
মাগুরার শালিখা উপজেলার তালখড়ি ইউনিয়নের ভাটোয়াইল গ্রামের ‘বাদুড়পাড়া’ স্থানীয়দের কাছে অতি পরিচিত এক নাম। মাগুরার শালিখায় অবস্থিত এ গ্রামে নিস্তব্ধ ও বড় ঝোপ বিশিষ্ট গাছগুলোতে দলবেঁধে বসবাস করত শত শত বাদুড়। ফলে ওই গ্রামটি বাদুড় গ্রাম বলে পরিচিত হয়। একসময় বাদুড়ের চিঁ চিঁ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠত পুরো এলাকা। কখনোবা রাতের আকাশেও ঝাঁকবেঁধে উড়তে দেখা যেত এই প্রাণীগুলোকে। দিনের আলোতে গাছের মগডালে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকত বাদুড়। তবে এখনকার চিত্রটা ভিন্ন। নানা কারণে বাদুড় আজ বিলুপ্তির পথে। কয়েক বছর আগেও অসংখ্য বাদুড়ের দেখা মিলত এখানে। সে তুলনায় এখন আর দেখা মেলে না বাদুড়ের। খাবারের অভাব, শিকারির উপদ্রব, আবাসস্থল ধ্বংস, ঝড়বৃষ্টি, দাবদাহসহ নানা বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে স্তন্যপায়ী এ প্রাণীগুলো।
বাদুড় মিয়ানমার ও উত্তর ভারত থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেই বেশি অবস্থান করে। দিনের বেলা এরা দলবেঁধে কোনো অন্ধকার গুহায় বিশ্রাম নেয়। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ গাছসহ অনেক উদ্ভিদের পরাগায়নে সহায়তা করে বাদুড়। বাদুড় একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী যা পাখার সাহায্যে আকাশে উড়তে সক্ষম। এটি পৃথিবীর একমাত্র উড্ডয়ন ক্ষমতা বিশিষ্ট স্তন্যপায়ী প্রাণী।
নিশাচর এ প্রাণীগুলো দিনের বেলায় বিচরণ কম করলেও রাতের বেলায় তারা খাবারের সন্ধানে বের হয়। এদের দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত কম। তারা শ্রবণশক্তির ওপর নির্ভর করে চলাফেরা করে। তবে বিলুপ্তপ্রায় বাদুড়গুলো শালিখা উপজেলার ভাটোয়াইল গ্রামের রবিন কর্মকারের বাড়ির বটগাছে দেখা যায়।
রবিন কর্মকার বলেন, কবে থেকে আমাদের এই বটগাছে বাদুড় বসবাস করে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। আমার ঠাকুরদাদার মুখে গল্প শুনেছি তার ঠাকুরদাদার আমলে আগে থেকেও নাকি আমাদের বাড়ির এই বট গাছে বাদুড় বসবাস করত। এখন আর আগের মতো বাদুড় থাকে না। শিকারিরা জাল পেতে মেরে নিয়ে যায়, খাবারের অভাব ও আবহাওয়ার কারণে এই বাদুড় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গাছে গাছে বাদুড়ের ডানা ঝাপটানো অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য আর আগের মতো চোখে পড়ে না।
দিঘল গ্রামের হিমাংশু দেব বর্মণ বলেন, শীত মৌসুমে খেজুর গাছে গাছি যখন রস বের করত তখন কীটনাশক স্প্রে, চোরা শিকারি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ উপজেলায় বিলুপ্ত হচ্ছে বাদুড়। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হুমকির মুখে এই প্রাণীগুলো। আশপাশের বাগান ও মাঠে নেই পর্যাপ্ত খাবার। খাবার সংকটের কারণে অনেক দূর পাড়ি দিতে হয় তাদের। আর সেখান থেকে ফিরছে না এসব বাদুড়। ফলে বর্তমানে বাদুড় অনেক কম দেখা যায়।
শ্রী ইন্দ্রনীল অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান সংগঠক শিক্ষক ও গবেষক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, বাদুড় একটি সংবেদনশীল প্রাণী যা পরিবেশের অসহিষ্ণু তাপমাত্রায় টিকে থাকতে পার না তাই প্রাণীগুলো আজ বিলুপ্তির পথে তবে এদের সময়মতো রক্ষা না করলে পরিবেশের জন্য এরা অশনিসংকেত বয়ে আনতে পারে। বিলুপ্ত প্রায় বাদুড়ের আবাসস্থল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ চেয়েছে এলাকাবাসী।