পন্য পরিবহন ভল্টগেট’র বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে মোংলা বন্দর: ডুবন্ত নৌযান ও নিখোজ ৩ নাবিকের লাশ উদ্ধার হয়নি দুই দিনেও
- আপডেট সময় : ০১:৫৯:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ ২২৩ বার পড়া হয়েছে
মোংলা বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে নদী পথে পন্য পরিবহন করছে ভল্টগেট নামের দুরপাল্লার নৌযান। নেই নৌ-পথে চলাচলের বৈধ কাগজ পত্র, দক্ষ্য মাষ্টার সুকানী বা নদী পথে চলাচলের জন্য যোগাযোগ ব্যাবস্থা, যার কারনে ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা। এদিকে পশুর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজ এমভি ফারদিন-১ গত দুই দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধারকাজ শুরু করতে পারেনী মালিক বা বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিখোজ ৫ নাবিকের মধ্যে দুই জনের লাশ উদ্ধার করতে পারলেও এখনও নিখোজ রয়েছে ৩ নাবিক। সাময়ীক ভাবে কোস্টগার্ডের ডুবুড়ী দল অনুসন্ধান স্থগীত করলেও তাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে, সহায়তা করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পশুর চ্যানেল দিয়ে ৬শ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকার ৯ নম্বর এ্যাঙ্কারেজ বয়া থেকে ঢাকার গাবতলী যাওয়ার উদ্দোশ্যে মোংলার দিকে ছেড়ে আসছিল কার্গো জাহাজ এমভি ফারদিন-১। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিপরীত দিক থেকে আসা এমভি হ্যান্ডি পার্থ নামের একটি বানিজ্যিক জাহাজ বন্দর ত্যাগ করার সময় মুখো-মুখী সংঘর্ষ হয়ে মুহুর্তের মধ্যে কার্গো জাহাজটি ৭ জন নাবিকসহ ডুবে যায়। এ সময় ওই কার্গো জাহাজে থাকা মাস্টার, সুকানী, ড্রাইভার, ও স্কট (পন্য পাহারাদার) সহ ৭ নাবিকের মধ্যে ভান্ডারিয়া উপজেলার পাইকখালী গ্রামের লস্কর রায়হান চৌধুরী ও মোংলা উপজেলার নারকেলতলা গ্রামের মোঃ রুবেল সাতরিয়ে কিনারে উঠতে পারলেও বাকি ৫জন নিখোজ হয়। নিখোজদের মধ্যে থেকে সুকানী মহিউদ্দিন ও গ্রিজার নুর আলম’র লাশ মঙ্গলবার সন্ধায় হারবাড়িয়ার এলাকার দক্ষিন পাশ থেকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। এছাড়া রবিউল, জিহাদ ও সামছুর লাশ গত দুই দিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নী। নিখোজ ৩ নাবিকের লাশের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে কোস্টগার্ড ও মালিক পক্ষের পৃথক দুইটি দল।
মোংলা লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের মোংলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাচ্চু হাওলাদার বলেন, যে ভল্টগেটটি ডুবেছে, সেটি বন্দর থেকে পন্য পরিবহনের কোন বৈধ পারমিট, দক্ষ্য মাস্টার সুকানী বা নৌপথে সিগনালের মাধ্যমে চলাচলের ব্যাবস্থা নাই। এছাড়া কিছু কেরিয়ার (পন্য পরিবহন মালিক) অতি মোনাফার লোভে কার্গো লাইটারকে বাদ দিয়ে ভল্টগেট দিয়ে পন্য পরিবহন করে নিয়ে যায়। এতে একদিকে ভাড়া কম হওয়ায় পন্য মালিক লাভবান হয় আর অন্য দিকে সরকার হারায় রাজস্ব। এগুলো বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময় অবৈধভাবে নৌ-পথে চলাচল করায় দেশের নৌপথে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ভল্টগেট নামের অবৈধ নৌ যানগুলো দিনে চলাচল করে খুবই কম, যার প্রমান সোমবার রাতে বন্দর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া এমভি ফারদিন-১। ইতি পুর্বে বেশ কয়েকটি লাইটার বা কার্গে ডুবির ঘটনা ঘটেছে কিন্ত মানুষের জানের ক্ষতি হয়নী আর অবৈধ ভল্টগেট ডুবির ফলে ৫টি জীবনের বাতি নিভে গেলে মুহুর্তের মধ্যে বলে মন্তব্য করেন নৌযান সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
অপরদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, বন্দরের চ্যানেল সচল রাখতে মালিক পক্ষকে দ্রæত নৌযানটি উত্তলনের জন্য তাগীদ দেয়া হয়েছে এবং কি কারনে পন্য বোঝাই নৌযানটি ডুবলো বা তার পন্য পরিবহনের বৈধ পারমিট ও কাগজ পত্র আছে কিনা তার অনুসন্ধানে সহকারী হারবার মাস্টার আমিনুর রহমান কে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যা আগামী ৭ কার্য দিবসে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে। বন্দরের অভ্যান্তরে দেশী-বিদেশী বানজ্যিক জাহাজ আসা-যাওয়ায় কোন সমস্য সৃস্টি হচ্ছে না, মুল চ্যানেল ঝুকি মুক্ত রয়েছে।
এছাড়া, বন্দরের আমদানী ও রপ্তানীকৃত পন্য অবৈধভাবে পরিবহন করা ভল্টগেট’র বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে এবং অবৈধ ভাবে পন্য পরিবহনের কারন জানতে আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানকেও (পন্য পরিবহন মালিক) কে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশী নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর (খুলনা) জোনের দায়ীত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ভল্টগেট ব্যাবহারের বিষয় কঠোর পদক্ষে নেয়ার জন্য আহবান জানান বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় ৯ নম্বর এ্যাঙ্কারেজ বয়ায় নঙ্গর করা ২০ হাজার মে. টন কয়লা বোঝাই মাল্টার পতাকাবাহী বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ এম,ভি এলিনা-বি। ওই জাহাজ থেকে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় দিকে ৬শ’ মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই করে আসার সময় দুর্ঘটনা কবলীত হয় এমভি ফারদিন-১ ভল্টগেটটি।