ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পেতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা
- আপডেট সময় : ০৭:০৩:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৭৯ বার পড়া হয়েছে
গত ১৭ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে কালুখালী উপজেলার পাতুরিয়া গ্রামের ফজলু মন্ডলের পাটক্ষেত থেকে অজ্ঞাত একটি মৃতদেহের মাথার খুলি, চুল, হাড়সহ দেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ, পায়ের স্যান্ডেল, পরিহিত জামা ও ওড়না দেখে ওই গ্রামের আবুল কাশেম ব্যাপারী তার ছোট মেয়ে জান্নাতুল নেছার (১৯) মৃতদেহ বলে সনাক্ত করেন।
এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে ১৮ জুলাই কালুখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে তদন্ত করে গত ৮ আগস্ট কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের বিকয়া গ্রামের পান্নু মন্ডলের ছেলে মো. মাহফুজ মন্ডলকে (২১) গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) পাংশা উপজেলার বিকয়া গ্রামের দুলাল খানের ছেলে রবিউল খান (২১), রমজান মন্ডলের ছেলে হাকিম মন্ডল (২০) এবং আশুরহাট গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে হাসিব খানকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা সকলেই এ ঘটনার সাথে জরিত থাকার কথা স্বীকার করেন।
রবিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ী জেলা পুলিশ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার জি. এম. আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, জান্নাতুল নেছা আবুল কাশেম ব্যাপারীর ৭জন মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তার ৪ বছর আগে বালিয়াকান্দি উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের জসিম বেপারীর ছেলে কুদ্দুস বেপারীর সাথে বিবাহ হয়। বিয়ের ৩ বছর পর তাদের বিচ্ছেদ হলে সে তার সন্তানসহ পিতার বাড়ীতে বসবাস করতো। প্রায় ৬ মাস গার্মেন্টসে চাকুরী করে। গত ৩ জুলাই মাহফুজ মন্ডলের সাথে জান্নাতুল নেছার ফেসবুকে পরিচয় হয় এবং ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। জান্নাতুল নেছাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ী থেকে বের করে এনে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাহফুজ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য প্ররোচিত করতে থাকে। এক পর্যায়ে জান্নাতুল বাড়ী থেকে পালিয়ে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়। গত ৫ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার সময় তার নিজ বাড়ী থেকে বের হয়ে বাড়ীর সামনে রাস্তায় আসে। মাহফুজকে দেখে জান্নাতুলের পছন্দ হয় না। কারণ সে ছিল প্রতিবন্দী। তখন রবিউল জানায় যে, ম্যাসেঞ্জারে সে নিজে কথা বলেছে। বাকী সকলে তার বন্ধু এবং তাদের বিয়েতে সহায়তা করবে। লোকচক্ষুর অন্তরালের জন্য জান্নাতুলকে পাটক্ষেতের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায় এবং তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী দলবেধে ধর্ষণ করে। তখন জান্নাতুল তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার কথা বললে তারা শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফেলে যায়। তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও ফেলে দেয়। এটা আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি কুফল। সকলকে ফেসবুক ব্যবহারে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. সালাহউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) রেজাউল করিম, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা, কালুখালী থানার ওসি প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাসসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।