ভর্তি হয়েও টাকার অভাবে পড়তে পারছে না বাঁধন
- আপডেট সময় : ০৫:০৯:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০২৩ ৭০ বার পড়া হয়েছে
সোনার স্বপ্নের সাধ কবে আর হবে!!! গরীব হয়ে জন্ম নেওয়াটাই কি পাপ? টাকার অভাবে ঢাকা কলেজে গণিত সাবজেক্টে অনার্সে ভর্তি হয়েও বাড়ীতে বসে আছে সে। ঢাকায় থাকা খাবার জন্য যে খরচ তা জোগাড় করা তার বাবার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। ঢাকায় একটা টিউশন জোগাড় করতে সিনিয়র ভাইদের সাথে যোগাযোগ করছে, কিন্তু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে বাড়ীতেই পড়াশুনা করছে।
বিশ্বদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না হলেও এক বুক আশা নিয়ে শেষমেশ ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছে। ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম দেখে দেখে বড় হয়েছে সে। তার বাবা স্থানীয় একটি হ্যাচারিতে স্বল্প বেতনে চাকুরি করেন। দুই ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে পরিবারের ব্যায়ভার তার পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। সংসারের ভরণ পোষণের টানা পোড়ন যেন তাদের নিত্য সঙ্গী।
ছোটবেলা থেকে দৃঢ় মনোবল ও আত্নবিশ্বাসের অধিকারী বাঁধন অধিকারি। অভাব ও সংসারের টানাপোড়নকে সাথে নিয়ে স্কুল কলেজে পড়ার পাশাপাশি সে টিউশনিও করেও নিজের পড়াশুনা চালিয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার শ্রীদাম দত্তপাড়া কুন্ডুপাড়া গ্রামের রাম প্রসাদের ছেলে বাঁধন। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। স্থানীয় চর বালিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শেষ করে, গোয়ালন্দ প্রপার হাই স্কুলে থেকে সে এসএসসি পাশ করে গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বাঁধন। অভাব ও নানাবিধ সমস্যা নিয়ে এতদূর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও এবার হঠাৎ থমকে গেছে তার পাড়ালেখা। তবুও স্বপ্ন বুনছেন সরকার বা বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে হয়ত তার স্বপ্ন পূরন হবে।
বাঁধনের মায়ের সাথে সাক্ষাত কালে বলেন,”আমার দুই ছেলে। ভিটে মাটি ছাড়া আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা জমি নেই। ওর বাবা যা আয় রোজগার করে তা দিয়ে সংসারটা কোনোমত করে চালিয়ে নিচ্ছি। আমার বাঁধন কষ্ট করে এতদূর অব্দি গেছে। খেয়ে না খেয়ে তার পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি৷ এখন আমার ছেলে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু সেখানে পড়ালেখার খরচ ছাড়াও থাকা খাওয়ার জন্য প্রতিমাসে অনেক টাকা প্রয়োজন। সেটা আর সাধ্যে কুলাচ্ছেনা।ছোট ছেলেটা গোয়ালন্দ নাজিরুদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে, ওর রোল নং-২। সামনেই পূজা, ছেলেদের নতুন পোশাক কিনে দেব সে সামর্থই আমাদের নেই, বলে কাঁন্নায় আঁচলে মুখ ঢাকেন বাঁধনের মা। তিনি আরও বলেন, বাঁধন ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েছে। এখন যাতায়াতসহ ওখানে কয়েকমাস থাকার খরচ দেওয়ার মত আমাদের সামর্থ্য হচ্ছে না। যদি আপনারা আমাদের সহযোগিতা করেন তাহলে আমার ছেলে হয়ত একদিন মানুষ হতে পারে।
দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বাঁধন বলে, আমার বাবা- মা আমাকে মানুষ করার জন্য অনেক কষ্ট করছেন। আমি টাকার জন্য ঠিকমত প্রাইভেট পড়তে পারিনি। নিজে টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি, কিন্তু ঢাকা কলেজে তো ভর্তির সুযোগ তো পেয়েছি। টাকার অভাবে ওখানে ভর্তি হয়েও গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলো করতে পারছি না। বাড়ীতে বসে পড়ালেখা করছি। ঢাকাতে একটু পরিচিত হলে হয়ত নিজেই টিউশানি জোগাড় করতে পারতাম। কিন্তু নতন অবস্থায় সেটাও পারছি না। এত টাকা দিয়ে ঢাকায় রেখে পড়ানের সক্ষমতা আমার পরিবারের নেই। আমাদের সংসারে এমন কোন সম্পদ নেই যেটা বিক্রি করে আমার বাবা-মা আমার পড়ার খরচ চালাবেন। গরীব হয়ে জন্ম নিয়েছি। স্বপ্ন তো অনেক ছিলো, ঈশ্বর তো তা পূরণ করলেন না। আমি চাই না আমার পড়াশোনা কোনোভাবে থেমে যাক, কিন্তু এ মুহূর্তে আমি কি করব বুঝতে পারছি না।