কোথায় যাবেন চাকরিপ্রার্থীরা?
- আপডেট সময় : ০১:৩৯:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ ২২৪ বার পড়া হয়েছে
মহামারিতে দেড় বছরেরও বেশি সময় স্থবির ছিল দেশের অর্থনীতি। এ সময় হয়নি নতুন নিয়োগ। উল্টো কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছিল অনেক প্রতিষ্ঠানকে। আগের মতো বিদেশেও যেতে পারেনি শ্রমিকরা। বিদেশ থেকেও অনেকে চাকরি হারিয়ে ফিরেছেন দেশে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই ডুবে আছেন হতাশায়। একইদিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ায় প্রার্থীদের একটা বড় অংশ প্রস্তুতি নিয়েও দিতে পারছেন না পরীক্ষা। কোনটা রেখে কোনটায় অংশ নেবেন, তা নিয়ে পড়েছেন দারুণ বিড়ম্বনায়।
আগামী ১৯ নভেম্বর ৪টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা। সবকটি শুরু হবে একসঙ্গে। এদিন সাতটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৭৭১টি সিনিয়র অফিসার পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার সময় সকাল ১০-১২টা। প্রায় একই সময়ে (সকাল ১০-১১.৩০টা) খাদ্য অধিদফতরের উপখাদ্য পরিদর্শক পদের পরীক্ষা হবে। এতে ২৫০ পদের বিপরীতে চার লাখ ১১ হাজার ৮৯৬ পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
একই সময়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-এর রাজস্ব খাতভুক্ত ‘নিরীক্ষক (অডিটর)’ পদের নিয়োগ পরীক্ষা। এ পরীক্ষাও হবে সকাল ১০-১১ টায়। একই সময়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রোবেশনারি অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
রীতি অনুযায়ী, শুক্র ও শনিবার চাকরির পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ পরীক্ষা শুক্রবারে পড়ায় প্রার্থীরা দোটানায় পড়েছেন।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর একদিনে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল। ২৯ অক্টোবর বিসিএসসহ একইদিনে আরও অন্তত এক ডজন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা হয়েছিল। ৮ অক্টোবর সকাল-বিকাল মিলে হয়েছিল সরকারি বিভিন্ন দফতরের ১৪টি চাকরির পরীক্ষা।
চাকরিপ্রার্থীরা জানান, তারা একাধিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করেন। প্রতিটি আবেদনে ৩০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। অনেকেই টিউশনির কষ্টের টাকা জমিয়ে আবেদন করেন। একই সময়ে পরীক্ষা পড়লে তাদের ওই কষ্টের টাকা জলে যায়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেক গবেষণা ও পর্যালোচনা করে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কাউকে পরীক্ষা থেকে দূরে রাখতে তারিখ দেওয়া হয় না। তারপরও জটলা বেঁধে যায়।
তিনি আরও বলেন, বিগত দুই বছর করোনার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। এ কারণে জট বেঁধেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় খেয়াল করে বিসিএস পরীক্ষার দিন যেন ব্যাংকের পরীক্ষা না নেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্য কোনও পরীক্ষার সময় নিয়ে ভাবতে গেলে পরীক্ষা পাঁচ বছরেও নেওয়া যাবে না।
জানা গেছে, দেশের শ্রমবাজারে বছরে প্রায় ১০ লাখ নতুন কর্মক্ষম মানুষ প্রবেশ করছে। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ৪৭ শতাংশ গ্র্যাজুয়েটের চাকরির সুযোগ হয় না বলে জানিয়েছেন শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় না থাকায় একইদিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু সরকারি ব্যাংকগুলোর সমন্বয় করে। তবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও সরকারি দফতরগুলো চাইলে অনলাইনেও পরীক্ষা নিতে পারে।
বিআইবিএমের তথ্য বলছে, ব্যাংকগুলোয় নতুন নিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ২০১৯ সালে যেখানে নতুন নিয়োগের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ, সেখানে ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশে। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) এমপ্লয়ি সিলেকশন ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ : আ মিক্সড মেথড অ্যানালাইসিস’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
আবার সরকারি তথ্য বলছে, করোনা মহামারির প্রথম বছরেই চাকরি কমেছিল ২৯ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে তা ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে দেশের চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশের শীর্ষ অনলাইন প্লাটফর্ম বিডিজবস ডটকমের তথ্যানুযায়ী, প্লাটফর্মটিতে ২০১৯ সালে ৬৩ হাজার ৬০৮টি চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয়। ২০২০ সালে প্রকাশ হয় ৪৫ হাজার ২০৮টি। যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ কম। চলতি জুন পর্যন্ত বিডিজবসে চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয়েছে ৩২ হাজার ৭২১টি। ২০২০ সালের তুলনায় চলতি ছয় মাসে কমেছে ২৮ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিডিজবস-এর সিইও ফাহিম মাশরুর মনে করেন, ‘করোনার কারণে দুই বছরে চাকরিপ্রার্থীদের বিশাল জটলা বেঁধে গেছে। এ থেকে পরিত্রাণের পথও আছে। নিয়োগদাতারা ইচ্ছে করলে অনলাইনেও পরীক্ষা নিতে পারে। এতে চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যার সমাধান হবে, নিয়োগদাতার অর্থও সাশ্রয় হবে। বিডিজবস-এর মাধ্যমে এরইমধ্যে সিটি ব্যাংক ও এবি ব্যাংক অনলাইনে পরীক্ষা নিয়েছে। অনলাইনে পরীক্ষা হলে পরীক্ষার্থীরা একই দিন একাধিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।’
তথ্য সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউ,