সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদ শিরোনাম ::
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা, একগুচ্ছ সুপারিশ

আবু সাঈদ, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
- আপডেট সময় : ০৩:০৩:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২৪ বার পড়া হয়েছে
ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের আঞ্চলিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিভাগের ছয় জেলার সাংবাদিকরা এই সভায় অংশ নেন। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করা জরুরি। কোনো রাজনৈতিক আদর্শের প্রভাবে সংবাদমাধ্যম পরিচালিত হওয়া উচিত নয়। সারা দেশে সংবাদপত্রের জন্য একটি অভিন্ন জাতীয় সম্পাদকীয় নীতি থাকা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাজারে যে পরিমানে টেলিভিশন, রেডিও ও সংবাদপত্র অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা এই বাজারে অতি মাত্রায় বেশি সংখ্যায় দেওয়া হয়েছে। ফলে এই বাজার ৪৬টি টেলিভিশন চ্যানেল যার মধ্যে ৩৭টি চ্যানেল অপারেশনে রয়েছে, এই ৩৭টি টেলিভিশনের জন্য পর্যাপ্ত আয় ও বিজ্ঞাপনের বাজার নেই, যা এই বাজার ধারণ করতে পারছে না। আবার একই সাথে ২২ টি এফএম রেডিও স্টেশন রয়েছে, তাদের জন্যও পর্যাপ্ত বিজ্ঞাপনের উৎস নেই। এবং সংবাদপত্রে ডিএফপি তালিকাভূক্ত অর্থাৎ সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্য হিসাবে স্বীকৃত সারাদেশে ৬০০টি পত্রিকা রয়েছে এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ২৯৮টি। এতগুলো পত্রিকার বাজার রয়েছে কি না সেটা দেখার বিষয়। ঢাকায় যারা পত্রিকা বিক্রি করেন তাদের তালিকা অনুযায়ী ৪৮টি পত্রিকা বিক্রি করেন তারা অর্থাৎ এই ৪৮টি পত্রিকা ছাড়া বাজারে অন্য কোন পত্রিকার কোন চাহিদাই নেই, এ ছাড়া একটি পত্রিকাও বিক্রি হয় না। এই পত্রিকাগুলো বের হয় মুলত আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য, সরকারি অর্থ লোপাট করার জন্য। এই যে একটা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এখানে সুষম প্রতিযোগিতার কোন উপায় নেই, এখানে তারাই টিকে আছে যারা নানাভাবে অনিয়ম করছে, নানাভাবে শক্তি খাটাচ্ছে, প্রভাব খাটাচ্ছে, সেই প্রভাবেই তারা টিকে আছে। এখানে একটা শৃঙ্খলা বা সস্কার আনা প্রয়োজন রয়েছে, এমন ধরনের সস্কার আনা প্রয়োজন যাতে সুষম প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়, তা না হলে এখানে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারবেন না, সেখানে শৃঙ্খলা ফেরানোর বাস্তবতাও তৈরি হবে না। তবে সংবাদপত্রকে স্বাধীন, শক্তিশালী এবং বস্তুনিষ্ঠ রাখতে এই কমিশন কাজ করছে, যাতে সাংবাদিকরা পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারেন।
মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ন্যূনতম একটি বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকরা সঠিকভাবে তাদের প্রাপ্য সম্মানী পাবেন। সম্পাদক নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অনিয়মের কারণে অনেক জায়গায় পেশাগত অভিজ্ঞতা ছাড়াই সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসকল বিষয়গুলো এই কমিশন দেখছে, এবং একটি নীতিমালার মধ্যে আনার চেষ্টা করছে।
সভায় সাংবাদিকরা কমিশনের কাছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক প্রভাব থেকে সংবাদমাধ্যমকে মুক্ত রাখা, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিকদের মামলা প্রত্যাহার করা, ভুয়া পত্রিকাগুলো ডিএফপি’র তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পেতে কমপক্ষে ১৫-২০ বছরের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা বা পেশাগত ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করা, উপজেলা ও মফস্বল পর্যায়ের প্রেসক্লাব নেতাদের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদে অন্তর্ভুক্ত করা, ভুয়া সাংবাদিকতা বন্ধে প্রেস ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা এবং সাংবাদিকদের জন্য একক রেজিস্ট্রেশন নম্বর চালু করা, তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) তত্ত্বাবধানে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রস্তাব তুলে ধরেন গণমাধ্যম কর্মীরা।
সভায় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য আখতার হোসেন খান, বেগম কামরুন্নেসা হাসানসহ ফরিদপুরের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।