মানিকগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষ

জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ:
  • আপডেট সময় : ০৪:৪১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ৩৯ বার পড়া হয়েছে

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক, গরু দিয়ে হাল চাষ। প্রাচীনকাল থেকে কৃষি নির্ভর জেলা মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরু দিয়ে হাল চাষ ছিল ফসল উৎপাদনের প্রধান মাধ্যম। তবে আধুনিক যন্ত্রের প্রচলন আর সময়ের সঙ্গে পাল্টে যাওয়া কৃষি পদ্ধতির কারণে এ সনাতনী প্রথা আজ বিলুপ্তির পথে।

স্থানীয় প্রবীণ কৃষকদের মতে, একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি কৃষক পরিবারের কাছে হাল, লাঙল, জোয়াল, মই, এবং গরুর গোয়াল ছিল অপরিহার্য। লোহার ফাল এবং কাঠের লাঙল দিয়ে জমি চাষাবাদ করতেন কৃষকরা। গরুর গোবর জমিকে উর্বর করত, আর লাঙল দিয়ে মাটি ওলট-পালট করে তার নিচের পুষ্টিগুণ উপরে উঠে আসত। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এই চাষাবাদ মাটির উর্বরতা বাড়াত এবং কীটনাশক ছাড়াই জমি প্রস্তুত হতো।

গোলাপ নগর গ্রামের প্রবীণ কৃষক করিম সেখ বলেন, “আমাদের সময় জমি চাষ করার পাশাপাশি গরু পালন ছিল জীবিকার অন্যতম উৎস। গরু দিয়ে চাষ করায় মাটি ভালো থাকত, ঘাস কম হতো, আর জমির আর্দ্রতা ধরে রাখা যেত। এখন যন্ত্রের ব্যবহারে মাটি শক্ত হয়ে যাচ্ছে, উর্বরতা কমছে।”

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে চিত্র। ঘিওর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, “নতুন প্রযুক্তি এবং যন্ত্রের ব্যবহার কৃষি খাতে বিপ্লব এনেছে। কম সময়ে বেশি ফলন করতে পারায় কৃষকরা ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের দিকে ঝুঁকছেন।” ফলে গরু দিয়ে চাষ এখন শুধুই স্মৃতি।

বড়টিয়া গ্রামের কাবিল মিয়া (৬০) বলেন, “ছোটবেলায় দেখতাম, ভোরে লাঙল-জোয়াল কাঁধে মাঠে যেত সবাই। কাজের ফাঁকে জমির আইলে বসে পান্তা ভাত, কাঁচা মরিচ আর আলুর ভর্তা খাওয়া ছিল ঐতিহ্যের অংশ। সেই দিনগুলো এখন হারিয়ে গেছে।”

কৃষি আধুনিকীকরণের ফলে ফসল উৎপাদন বেড়েছে, তবে কৃষক সমাজের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, আর আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অনেক দিকই হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো একদিন গরু দিয়ে হাল চাষ শুধুই থাকবে গল্প, কবিতা আর শিল্পকর্মে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

মানিকগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষ

আপডেট সময় : ০৪:৪১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক, গরু দিয়ে হাল চাষ। প্রাচীনকাল থেকে কৃষি নির্ভর জেলা মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরু দিয়ে হাল চাষ ছিল ফসল উৎপাদনের প্রধান মাধ্যম। তবে আধুনিক যন্ত্রের প্রচলন আর সময়ের সঙ্গে পাল্টে যাওয়া কৃষি পদ্ধতির কারণে এ সনাতনী প্রথা আজ বিলুপ্তির পথে।

স্থানীয় প্রবীণ কৃষকদের মতে, একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি কৃষক পরিবারের কাছে হাল, লাঙল, জোয়াল, মই, এবং গরুর গোয়াল ছিল অপরিহার্য। লোহার ফাল এবং কাঠের লাঙল দিয়ে জমি চাষাবাদ করতেন কৃষকরা। গরুর গোবর জমিকে উর্বর করত, আর লাঙল দিয়ে মাটি ওলট-পালট করে তার নিচের পুষ্টিগুণ উপরে উঠে আসত। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এই চাষাবাদ মাটির উর্বরতা বাড়াত এবং কীটনাশক ছাড়াই জমি প্রস্তুত হতো।

গোলাপ নগর গ্রামের প্রবীণ কৃষক করিম সেখ বলেন, “আমাদের সময় জমি চাষ করার পাশাপাশি গরু পালন ছিল জীবিকার অন্যতম উৎস। গরু দিয়ে চাষ করায় মাটি ভালো থাকত, ঘাস কম হতো, আর জমির আর্দ্রতা ধরে রাখা যেত। এখন যন্ত্রের ব্যবহারে মাটি শক্ত হয়ে যাচ্ছে, উর্বরতা কমছে।”

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে চিত্র। ঘিওর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, “নতুন প্রযুক্তি এবং যন্ত্রের ব্যবহার কৃষি খাতে বিপ্লব এনেছে। কম সময়ে বেশি ফলন করতে পারায় কৃষকরা ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের দিকে ঝুঁকছেন।” ফলে গরু দিয়ে চাষ এখন শুধুই স্মৃতি।

বড়টিয়া গ্রামের কাবিল মিয়া (৬০) বলেন, “ছোটবেলায় দেখতাম, ভোরে লাঙল-জোয়াল কাঁধে মাঠে যেত সবাই। কাজের ফাঁকে জমির আইলে বসে পান্তা ভাত, কাঁচা মরিচ আর আলুর ভর্তা খাওয়া ছিল ঐতিহ্যের অংশ। সেই দিনগুলো এখন হারিয়ে গেছে।”

কৃষি আধুনিকীকরণের ফলে ফসল উৎপাদন বেড়েছে, তবে কৃষক সমাজের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, আর আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অনেক দিকই হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো একদিন গরু দিয়ে হাল চাষ শুধুই থাকবে গল্প, কবিতা আর শিল্পকর্মে।