পাংশার দক্ষিণে আতঙ্ক
- আপডেট সময় : ০৯:১৯:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২ ১৬৯ বার পড়া হয়েছে
আর মাত্র দুইদিন পরেই পঞ্চম ধাপে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার দশটি ইউনিয়নের ভোট গ্রহন। আজ মধ্যরাত থেকে প্রাচারণা শেষ হবে। শেষ মূহর্তেও প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে প্রার্থীরা। ভোটারদের কাছে গিয়ে চাচ্ছেন ভোট, দিয়েছেন এলাকার উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটের সময় ঘনিয়ে আসলেও শঙ্কা কাটছে না ভোটারদের। অতিতের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনার ভয় এখনো কাটেনি সাধারণ মানুষের মন থেকে। বিশেষ করে উপজেলার মৌরাট,পাট্ট্রা, কসবামাঝাইল, কলি
রাজবাড়ী পাংশা উপজেলা কয়েকটি জেলার সিমান্তবর্তী এলাকায় অথাৎ মাগুড়া জেলার শ্রীপুর উপজেলা,ঝিনাইদাহ জেলার শৈলকুপা,কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা। ফলে নির্বাচনের সময় চরমপন্থীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনের মৌরাট, পাট্ট্রা, কসবামাঝাইল, কলি
এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও ঘটছে বিছিন্ন ঘটনা। সোমবার দুপুরে মৌরাট ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের প্রচারে বাধা ও কর্মীদের মারপিটের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আলী সরদার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানায়, সকালে সে তার কয়েকজন কর্মী ২নং ওয়ার্ডে আনারস প্রতীকে ভোট চাইতে গেলে প্রথমে তাদের বাধা দেন নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা। পরে তার আনারস প্রতীকের কর্মীদের মারপিট করে আহত করে। এসময় আনারসের পাঁচ কর্মী আহত হয়। পরে তাদের পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এছাড়াও গত শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটে পাট্টা ইউনিয়নে। এসময় নৌকা প্রার্থী মো. আব্দুর রব মুনার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে সতন্ত্র প্রার্থী হাসিবুর রহমান বরকত (মোটর সাইকেল)এর প্রধান এজেন্টকে গুলিবর্ষন, কর্মীর ওপর হামলা ও নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের অভিযোগ উঠে।
অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রব মুনা পাল্টা অভিযোগ করেন সতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট সাইদুর রহমান সিন্টুর বিরুদ্ধে। তারা নিজেরাই গুলিবর্ষন ও নিজেদের অফিস ভাংচুর করে নৌকার ওপর দায় চাপেেচ্ছ বলে অভিযোগ করে তিনি।
এরআগে শুক্রবার রাতে সরিষা ইউনিয়নের বহলাডাঙ্গা এলাকায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমল আল বাহার ও বিদ্রোহী প্রার্থী আহম্মেদ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পারডেমনামারা ও দেওপাড়া গ্রামের কয়েকটি বসতঘর ও দোকানপাট ভাংচুর করা হয়।
মৌরাট ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রামের আলেয়া বেগম জানায়,গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারি নাই। ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই শুরু হয় মারামারি। এবছর কি হবে সেটা জানি না।
পাশে থাকা কুলসুম খাতুন বলেন, ভোটের সময় আসলেই মারামারি ফাটাফটি শুরু হয়। গত নির্বাচনে ভয়ে ভোট দিতেই যাই নাই। এবার পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবো।
কসবামাঝাইল ইউনিয়নের রুস্তম আলী জানায়, গত নির্বাচনে গোলাগুলি, মারামারি,বাড়ি ঘর ভাংচূরের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যা হলেও এখানে গোলাগুলি,ওখানে গোলাগুলি,উমকের কুপায়ছে, তমুকের পিটাইছে। এইসবই চলেছে। এবারেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে তবে গত নির্বাচনের তুলনায় কম। এরপরও আমরা আতঙ্কে রয়েছি। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখতে। যে সাধারণ ভোটারেরা কোন ভয়ভীতি ছাড়াই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারি।
সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা জানান, ছোট খাটো দু একটি বিছিন্ন ঘটনা ঘটছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনায় মামলাও হচ্ছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা সাধারণ ভোটারদের কাছে গিয়ে আস্বস্থ করেছি। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই তারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোট দিবে। এমনকি নির্বাচন পরবর্তীতেও পাংশা উপজেলায় কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটবে না। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: মাসুদুর রহমান জানায়, পঞ্চম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। মধ্যরাত থেকে প্রচার প্রচারণা শেষ হচ্ছে। আগামীকাল ৯০টি কেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ভোট গ্রহনের আগে প্রতিটা কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখতে মাঠে থাকবে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, বিজিপি, র্যাব, আনছারসহ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
তিনি আরও জানায়,উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৯জন,সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ১০৭ জন,সাধারণ মেম্বার পদে ৩৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। দশটি টি ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৯৭ জন।