সংবাদ শিরোনাম ::
সংবাদ শিরোনাম ::
ফেরি সঙ্কটে দৌলতদিয়া ঘাটে পাড়ের অপেক্ষায় ৫শতাধিক যানবাহন
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
- আপডেট সময় : ০৬:১৭:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫০ বার পড়া হয়েছে
দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সেইসাথে রয়েছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। ফলে ঘাট এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৪ টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ৫ শতাধিক বিভিন্ন যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে। এরমধ্যে অনেক অপচনশীল যানবাহন রয়েছে যারা ১৮-২০ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ফেরির নাগাল পায়নি। ফলে তীব্র শীত ও কুয়াশার মধ্যে আটকে থেকে সাধারণ যাত্রী, গাড়িচালক, হেলপার, কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও ঘাট সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার (২১ডিসেম্বর) দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা হতে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী শতশত গাড়ি মহাসড়কের দুই সারিতে অপেক্ষা করছে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও জরুরি পচনশীল পণ্যের গাড়িগুলোকে দ্রুত পার করার জন্য আলাদা একটি সারিতে রাখা হয়েছে। অপর সারিতে রয়েছে অপচনশীল ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান।
আটকে থাকা পরিবহনের চালকরা জানান, অপচনশীল অধিকাংশ গাড়ি সোমবার দুপুরের পর হতে সন্ধ্যা নাগাদ আসা। যারা ১৮ /২০ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ফেরির নাগাল পায়নি। ফেরিতে উঠতে তাদেরকে আরো দু-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও জরুরি যানবাহনগুলোও ৪/৫ ঘন্টার আগে ফেরিতে উঠতে পারছে না।
বিআইডব্লিউটিসি কতৃপক্ষ জানিয়েছে,দৌলতদিয়া -পাটুরিয়া নৌরুটে মঙ্গলবার সকাল থেকে মাত্র ১৪ টি ফেরি চলাচল করছে। এরমধ্যে ৭ টি ফেরি রোরো (বড়) এবং ৭ টি ছোট ফেরি। এখানকার শাহ পরান ও বনলতা নামের দুটো ফেরিকে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানায় রেখে জরুরি মেরামত কাজ করা হচ্ছে।
এছাড়া এ রুটের ৪ টি রেরো (বড়) ফেরি এক মাসের অধিক সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে রেখে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। ফেরিগুলো হচ্ছে ভাষা শহীদ বরকত, বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও শাহ আলী। স্বাভাবিক যানবাহন পারাপারের জন্য বিকল ফেরিগুলো দ্রুত সংস্কার হয়ে আসা দরকার বলে ঘাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
সাতক্ষীরা থেকে আসা কাভার্ডভ্যান চালক সুমন সরদার বলেন,তিনি সোমবার বেলা ২ টার দিকে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় আসলে পুলিশ সেখানে সিরিয়ালে আটকে দেয়। আজ (মঙ্গলবার) ভোর ৬ টার দিকে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে আসি।এখন বেলা ৩ টা বাজে। কিন্তু ফেরি ঘাট হতে এখনো অন্তত দুই কিলোমিটার দুরে আছি। আজকেও ফেরির নাগাল পাব কিনা জানি না।
পটুয়াখালী হতে আসা ঢাকার নবীনগরগামী ট্রাকচালক নাইম বেপারি জানান, ‘সোমবার বিকেল থেকে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব বলতে পারছি না। অনেক দূর্ভোগ হচ্ছে’।
এ সময় কয়েকজন চালক অভিযোগ করে বলেন, তাদের মত শতশত চালক ঘন্টার পর ঘন্টা নানা ভোগান্তি সহ্য করে মহা সড়কে আটকে আছেন। অথচ অনেক চালক পরে এসেও গোয়ালন্দ মোড় হতে দালালদের মাধ্যমে কতিপয় অসাধু ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে সরাসরি দৌলতদিয়া ঘাটে চলে আসছে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
গোপালগঞ্জে কোটালিপাড়া হতে ছেড়ে আসা দীগন্ত পরবহনের চালক মিজান খলিফা জানান, তিনি বেলা ১২ টায় ঘাটে এসে দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকা পড়েন। বেলা ৩টা পর্যন্ত ঘাট থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ সময় আটকে থেকে যাত্রীরা অনেক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, এই রুটে স্বাভাবিক যানবাহন পারাপারের জন্য অন্তত ১৮/২০ টি ফেরি দরকার। তা তো নেইই। উল্টো শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটের গাড়ির চাপ সামলাতে হচ্ছে তাদেরকে। দূর্ভোগ কমাতে বিকল ফেরিগুলো দ্রুত সংস্কার হয়ে আসা দরকার।
বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বানিজ্য) জামাল হোসেন বলেন, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুট দিয়ে সকাল ৮ টা হতে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত শুধুমাত্র ছোট যানবাহন পারাপার করা হয়। সেখানকার অধিকাংশ গাড়ি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুট ব্যবহার করে। ফলে এখানে এত চাপ। তবে দূর্ভোগ কিছুটা কমাতে যাত্রীবাহী ও পচনশীল গাড়িগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। এতে করে ঘাট এলাকায় অপচনশীলসহ শতশত যানবাহন আটকা পড়ছে।