ঠাকুরগাঁওয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব
- আপডেট সময় : ০৩:৩৩:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের নদীমাতৃক পরিচয়ে গর্বিত গ্রামবাংলার এক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব। একসময় ঠাকুরগাঁও জেলার খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও পুকুরে শীতকালে দলে দলে মানুষ পলো নিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠত। কিন্তু কালের বিবর্তনেদ এবং জলাশয় সংকোচনের কারণে এই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
তলাবিহীন কলসির আদলে বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে তৈরি একটি শৈল্পিক যন্ত্র পলো। ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিক ভাষায় এটি “পলো” নামে পরিচিত। শুধু মাছ ধরাই নয়, হাঁস-মুরগি ধরার কাজেও এটি ব্যবহৃত হতো। শীতকালে পানি কমে যাওয়ায় বিশেষ করে পৌষ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ ধরার প্রচলন ছিল।
পূর্বে গ্রামবাসীরা দিন তারিখ নির্ধারণ করে খাল-বিল বা জলাশয়ে একত্রিত হতেন। নির্দিষ্ট দিনে সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সৌখিন মৎস্য শিকারীরা এসে সারিবদ্ধভাবে পলো দিয়ে মাছ ধরতেন। লুঙ্গি গুটিয়ে বা “কাছা” বেঁধে ঝপঝপ শব্দে পলো চালিয়ে মাছ ধরার এক নান্দনিক দৃশ্য তৈরি হতো। মাছ ধরা পড়লেই পলোর ভেতর থেকে তা বের করে আনন্দে উল্লাস করতেন সবাই।
বর্তমানে জলাশয় ভরাট, নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়া এবং মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতির কারণে পলো দিয়ে মাছ ধরার এই ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে। হরিপুর উপজেলার জেলে রবিউল ইসলাম বলেন, “আগে সবাই মিলে মাছ ধরার উৎসব ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু এখন তা প্রায় হারিয়ে গেছে।”
স্থানীয়রা মনে করেন, আগামী প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহ্য তুলে ধরতে এবং সংরক্ষণ করতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। না হলে বাঙালির এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাবে।