9:09 am, Thursday, 20 March 2025

চার পুরুষের গল্প বলা মজিব আর নেই

চার পুরুষের গল্প বলা মজিব আর নেই

লোকটা বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছিলো। তারপরও বেশ সবল ছিলেন। চলতেন, ফিরতেন, কথা বলতেন বেশ স্পষ্ট স্বরেই। মনে হতো বৃদ্ধ নয়, যুবক।

গল্প শোনাতেন ব্রিটিশ আমলের। নীল চাষের। বুলবুলিতে ধান খাওয়া আসল গল্প,বর্গিদের গল্প। বলতেন ভারত পাকিস্থান বিভক্ত হবার গল্প। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার গল্প । আরো কতো কি।

পাকিস্থান আমলের গল্প বলার সময় বলতেন এই তো সেদিনের কথা। বলতেন বঙ্গবন্ধু কলিকাতা যাওয়ার সময় কালুখালীতে যাত্রা বিরতি নিতেন সে সব কথা। এ সবই ছিলো তার স্বচক্ষে দেখা সেদিনের গল্প ।

শিশু-কিশোর, যুবরাও তার গল্প শুনতেন। আগ্রহ ভরে কাছে গিয়ে বসতেন।খোজ নিতেন তার শারীরিক অবস্থার। কৈশর জীবনের। বেশ জমতো এই বৃদ্ধ লোকটাকে নিয়ে।গল্প বলা এই বৃদ্ধের নাম মজিবুর রহমান বিশ্বাস।

রাজবাড়ীর কালুখালীউপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের তফাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা হলেও আজ তিনি ওপার জগতের লোক। গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় তিনি পরপারে চলে গেছেন। মৃত্যুকালে তার হয়েছিলো ৯৫ বছর। মঙ্গলবার সকালে হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও দোয়ার মধ্যদিয়ে কালুখালীর তফাদিয়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি ৫ ছেলে,৬ মেয়েসহ অসখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

কালুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানায়, শুক্রবার ষ্ট্রক রোগের কারনে মজিবুর রহমান এর মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরন শুরু হয়। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নানা পরীক্ষার পর ডাক্তারগন জানান, তাকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরন হতে থাকায় তার মৃত্যু হয়েছে।

মজিবুর রহমান বিশ্বাস এর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে আমরা চার পুরুষের স্বচক্ষে দেখা গল্প বলা এক মানুষ হারালাম। হারালাম এক ৯৫ বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

চার পুরুষের গল্প বলা মজিব আর নেই

Update Time : 09:35:55 am, Wednesday, 9 February 2022

লোকটা বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছিলো। তারপরও বেশ সবল ছিলেন। চলতেন, ফিরতেন, কথা বলতেন বেশ স্পষ্ট স্বরেই। মনে হতো বৃদ্ধ নয়, যুবক।

গল্প শোনাতেন ব্রিটিশ আমলের। নীল চাষের। বুলবুলিতে ধান খাওয়া আসল গল্প,বর্গিদের গল্প। বলতেন ভারত পাকিস্থান বিভক্ত হবার গল্প। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার গল্প । আরো কতো কি।

পাকিস্থান আমলের গল্প বলার সময় বলতেন এই তো সেদিনের কথা। বলতেন বঙ্গবন্ধু কলিকাতা যাওয়ার সময় কালুখালীতে যাত্রা বিরতি নিতেন সে সব কথা। এ সবই ছিলো তার স্বচক্ষে দেখা সেদিনের গল্প ।

শিশু-কিশোর, যুবরাও তার গল্প শুনতেন। আগ্রহ ভরে কাছে গিয়ে বসতেন।খোজ নিতেন তার শারীরিক অবস্থার। কৈশর জীবনের। বেশ জমতো এই বৃদ্ধ লোকটাকে নিয়ে।গল্প বলা এই বৃদ্ধের নাম মজিবুর রহমান বিশ্বাস।

রাজবাড়ীর কালুখালীউপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের তফাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা হলেও আজ তিনি ওপার জগতের লোক। গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় তিনি পরপারে চলে গেছেন। মৃত্যুকালে তার হয়েছিলো ৯৫ বছর। মঙ্গলবার সকালে হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও দোয়ার মধ্যদিয়ে কালুখালীর তফাদিয়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি ৫ ছেলে,৬ মেয়েসহ অসখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

কালুখালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানায়, শুক্রবার ষ্ট্রক রোগের কারনে মজিবুর রহমান এর মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরন শুরু হয়। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নানা পরীক্ষার পর ডাক্তারগন জানান, তাকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরন হতে থাকায় তার মৃত্যু হয়েছে।

মজিবুর রহমান বিশ্বাস এর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে আমরা চার পুরুষের স্বচক্ষে দেখা গল্প বলা এক মানুষ হারালাম। হারালাম এক ৯৫ বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী।