মোংলা আন্তজার্তিক চ্যানেলের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু ক্যানেল নামকরণ
- আপডেট সময় : ০৫:৪৪:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী ২০২২ ১৭৪ বার পড়া হয়েছে
দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের এক মাত্র আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাম পরিবর্তন করে এখন বঙ্গবন্ধু ক্যানেল নামকরণ করা হয়েছে। মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, নারয়নগঞ্জনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নৌ-পথে পন্য পরিবহনের জন্য নৌ-রুট এটি।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এ উদ্দ্যোগ গ্রহন করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। ২০১০ সারে পর পলি পরে সম্পুর্ন বন্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক এই চ্যানেলটি। পরে তিন তিনবার চেষ্টার পর ২০১৬ সালে পুনরায় চালু করে বর্তমান সরকার। চ্যানেলটি চালু হওয়ার পর শুধু মাত্র দিনের বেলায় অনওয়ে রুট হিসেবে নৌযান চলাচল করতে পারতো এবং রাতে চলাচল নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্ত নাম পরিবর্তনের ফলে ২০ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার মন্ত্রনালয়ের এক ঘোষনায় রাতেও বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী ক্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। তাই এখন থেকে আর এই নৌরুট দিয়ে রাতে নৌযান চলাচলের পূর্বের বিধি নিষেধ থাকছেনা।
মোংলা সমুদ্র বন্দর ও খুলনার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার নৌ-যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোংলা-ঘষিয়াখালীর এ নৌ-চ্যানেল। মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের দূরত্ব কমানোর জন্য ১৯৭৪ সালে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার কৃত্রিম পথ খনন করে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথটি চালু করা হয়। চট্টগ্রাম, ঢাকা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চল ও সিলেট অঞ্চল থেকে খুলনা, নোয়াপাড়া, আংটিহারা হয়ে ভারতগামী পণ্যবাহী সব বড় বড় কার্গো জাহাজ এ পথ দিয়ে চলাচল করে থাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন দেশের নদী পথের গুরুত্ব বিবেচনায় মোংলা-ঘষিয়াখালী ক্যানেলটি খনন করেছিলেন। নাব্যতা সংকটের কারণে ক্যানেলটি ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বন্ধ ছিল এ চ্যানেলটি।
চ্যানেলটিতে পলি পরে ২০১১ সালে মাঝামাঝী দিকে এ পথটিতে নাব্য সংকটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নদী দিয়ে পন্যবাহী যান চলাচল শুরু করে। ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীর মৃগামারী ফরেষ্ট অফিস সংলগ্ন এলাকায় ভোর ৪ টার দিকে নোঙ্গর ছিড়ে তেল বাহী জাহাজ ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া জাহাজের তেল ছড়িয়ে পরলে এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়ে।
নৌ-দুর্ঘটনায় সুন্দরবনে তেল ছঢ়িয়ে পরায় সুন্দরবনের অভ্যান্তরে বনজ ও মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা শ্যালা নদী দিয়ে যান চলাচল বন্ধের সুপারিশ করে। বিকল্প নৌপথ মোংলা-ঘষিয়াখালী চানেল দ্রুত চালু করার ওপর জোর দেয় তারা।
তিন তিনবার চেষ্টার পর পুনরায় মোংলা বন্দরকে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ৭শ ৬কোটি টাকা ব্যায় ক্যানেলটির নাব্যতা রক্ষায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হয়। পরবর্তীতে আবারও ক্যানেলটি সচল হয়। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্যানেলটি উদ্বোধন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকে ধরে রাখার লক্ষে তার জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত মোংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেলকে ‘বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘষিয়াখালী (বিএমজি) ক্যানেল’ নামকরণ করা হয়েছে। এখন থেকে মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ-রুটটি ‘বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘষিয়াখালী (বিএমজি) ক্যানেল’ নামে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করবে।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে পাঠিয়ে এ তথ্য জানায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, মোংলা-ঘোষিয়াখালী নৌরুটটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধ ক্যানেল নামকরন করা হয়েছে এটা দীর্ঘদিনের দাবী ছিল। মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় থাকাকালীন এ চ্যানেলটি খনন করেছিলেন। তাই এর সাথে জাতির পিতার অনেক স্মৃতি জড়িত রয়েছে। জাতির পিতার স্মৃতিকে ধরে রাখতে নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এখন থেকে মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি ‘বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘষিয়াখালী (বিএমজি) ক্যানেল’ নামে পরিচিত লাভ করবে।
২০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আন্তর্জাতিক এ ক্যানেল দিয়ে দিনের মতই লাইটার, কার্গো, বার্জ কোস্টার ও ট্যাংকারসহ বিভিন্ন ধরণের নৌযান চলাচল করতে পারবে। দিনের মত রাতেও সার্বক্ষণিক নির্বিঘ্নে নৌযান চলাচলের জন্য নাইট নেভিগেশনের কাজ শুরু হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
এব্যাপারে পরিবেশ বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, মোংলা-ঘোষিয়াখালী নৌ-চ্যানেলের নাম পরিবর্তন হওয়া শুধু আমরা নয় দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সকলেই আনন্দীত। এ চ্যানেলটির সাথে বঙ্গবন্ধুর পরিশ্রমের ফল জড়িয়ে রয়েছে, মোংলা বন্দরকে বাঁচিযে রাখতে তখন থেকেই বঙ্গবন্ধ খেয়াল রেখেছিল। কিন্ত ৯০ দশকে বন্দরও মৃত হয়ে যায় আর চ্যানেল পলি পরে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর এপার থেকে ওপারে মানুষ পায়ে হেটে পার হতো। তাই জাতির পিতার স্মৃতিকে ধরে রাখতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মৃত বন্দরকে জীবিত করেছে, পাশাপাশী বন্দরের সাথে তার চ্যানেলকেও উজ্জীবিত করেছে। জাতির পিতার নামের সাথে চ্যানেলের নামকরন হওয়া আমরা প্রধানমন্ত্রীসহ এর সাথে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই।