এবার ফরিদপুরে কেটে ফেলা হলো গৃহবধূর মলদ্বারের নাড়ি
- আপডেট সময় : ১১:৪০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২ ৮৭৮ বার পড়া হয়েছে
ফরিদপুর: ফরিদপুরে নবজাতকের মাথা কেটে সেলাই ও নবজাতকের হাত ভাঙার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক গৃহবধূকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশনের সময় মলদ্বারের নাড়ি কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। অসুস্থ ওই গৃহবধূ বর্তমানে বিএসএমএমসি হাসপাতালের নতুন ভবনের পাঁচতলায় মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ঘটনার পর হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূর স্বামী রাজবাড়ী সদর উপজেলার নিমতলার বাসিন্দা ইটভাটা শ্রমিক মো. আব্দুল মান্নান ব্যাপারী।
অভিযোগে তিনি বলেন, স্ত্রী হাসনা বেগম (৩৪) পেটে ব্যাথাজনিত অসুস্থতার কারণে গত ২২ ডিসেম্বর ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গাইনি চিকিৎসকের কাছে গেলে তাকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডা. উৎপল নাগের কাছে রেফার্ড করা হয়। ডা. উৎপল নাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার অ্যাপেন্ডিক্স হয়েছে বলে জানান এবং দ্রুত অস্ত্রপচার না করলে বাঁচানো যাবে না বলে মত দেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ডা. উৎপল নাগ এসময় বিএসএমএমসি হাসপাতালে অস্ত্রপচার করাতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে এবং এই সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই বলে তাদের জানান। এরপর ওই চিকিৎসক তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে শহরের রথখোলায় পুরাতন বাসষ্টান্ডে অবস্থিত পিয়ারলেস হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং একটু পরেই তিনি ওই হাসপাতালে যাবেন বলে জানান।
রোগীর বাবা হাশেম মল্লিক বলেন, ডা. উৎপল নাগের কথা মত এরপর মেয়ে হাসনাকে পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নেওয়ার পর তিনটি পরীক্ষা করা হয় ২৬শ’ টাকায়। তারপর সেদিন সন্ধ্যায় তার অস্ত্রপচার করা হবে বলে জানানো হয়।
তিনি আরও বলেন, সবমিলিয়ে ২৬ হাজার টাকা খরচে রোগীর অ্যাপেন্ডিক্সের অস্ত্রপচার করা হয়। চারদিন পর হাসপাতাল থেকে রিলিজের আগে হাসনা বেগমের অপারেশনের সেলাই কেটে ড্রেসিং করার সময় মলদ্বার দিয়ে মল বের হতে থাকে। বিষয়টি ডা. উৎপল নাগকে জানানোর পর তিনি আবারও অস্ত্রপচার করার কথা বলেন এবং সেজন্য আরও এক লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। এরপর অসুস্থাবস্থায় হাসনা বেগমকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ ডা. উৎপল নাগ প্রতারণা করে টাকার নেশায় রোগীকে সরকারি হাসপাতাল থেকে ভুল বুঝিয়ে তার প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে যান এবং অদক্ষ ডাক্তার অথবা নার্স দিয়ে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করার সময় মলনালি কেটে ফেলেছেন। হাসনা বেগম ও মান্নান ব্যাপারী দম্পতির তিনটি মেয়ে রয়েছে। দরিদ্র এই পরিবার চিকিৎসা ব্যয় জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া মাসাধিককাল স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকায় মান্নান ব্যাপারীও কর্মহীন।
তারা জানান, এখন কীভাবে অসুস্থ হাসনা বেগমের চিকিৎসা চালাবেন তা বুঝতে পারছেন না। অসুস্থ হাসনার দশা দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। পরিবার তার ওষুধ-পথ্য জোগাতে পারছে না।
এ ব্যাপারে জানতে ডা. উৎপল নাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিএসএমএমসি হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে হাসনা বেগমকে অস্ত্রপচারের পরামর্শ দেওয়া এবং পুনরায় অস্ত্রপচারের করাতে এক লাখ টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ডা. উৎপল নাগ বলেন, ওই রোগীর অ্যাপেন্ডিক্স পেকে গিয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা তার হাত দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা কী কারণে এসব অভিযোগ করছে তা বুঝতে পারছেন না।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ওই রোগীর খোঁজখবর নিয়েছি। তার চিকিৎসার কোন ত্রুটি হবে না। তিনি বলেন, সার্জারির চিকিৎসক ডা. উৎপল নাগের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রঃ বাংলানিউজ ২৪