মোংলায় সকল ধর্মের লোক নিয়ে পিঠা উৎসবের মিলনমেলা
- আপডেট সময় : ০৭:১০:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩ ১৩৩ বার পড়া হয়েছে
পৌষ-পার্বণ মানেই বাঙ্গালীদের ঘরে ঘরে পিঠা উৎসবের ধুম। ভোজন রসিক বাঙ্গালীর ঐতিহ্যের সাথে যেন মিশে আছে ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা সহ নানা রকমের পিঠার নাম। তাই মোংলায় বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েগেলা পৌষের শেষে শীতকালীন পিঠা উৎসব।
দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলো পৌষের সন্ধ্যায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় হরেক রকমের বাহারি পিঠার উৎসবে। কনকনে শীতে গরম গরম হরেক রকম পিঠার স্বাদ নিতে এখানে ভিড় করছে মানুষ। তাই এ পিঠা উৎসবের মধ্যদিয়ে হিন্দু-মুসলিম ও খ্রীষ্টিয়ান সম্প্রদয় সহ সকল ধর্মের নানা বয়সী হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পৌষের শীত আসলেই যেন পিঠার খাওয়ার ধুম পড়ে দেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে। শহুরে জীবনে যেন অনেকটা অপরিচিত এই দৃশ্য। তবে মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা এলাকাটা যেন এক ভিন্ন চিত্র। পৌষের শুরুতেই ঘরে ঘরে পিঠা তৈরী না করে পৌষের শেষে এসে পিঠা উৎসবে আয়োজন করেণ এ ইউনিয়নের এলাকাবাসী। আর সেখানে বাঙ্গালির চিরাচরিত এই ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে সকলে মিলে করা হয় জমজমাট পিঠা উৎসব। এ মেলায় জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ উৎসবে মিলিত হয়। তাই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গত ৬ বছর ধরে পিঠা উৎসব পালন করে আসছে বুড়িরডাঙ্গাবাসী।
এছাড়াও আয়োজন করা হয়েছে কুইজ প্রতিযোগীতার। খাওয়া-দাওয়া শেষে সেরা পিঠা তৈরী নারীদের পুরস্কারও প্রদান করা হয়, তবে সেটি এখনই নয়। বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সম্ভলীত একটি পত্র ধয়িয়ে দেয়া হয়েছে সকলের হাতে। যে সকল প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো সঠিত উত্তর দিতে পারলে আগামী ৭ দিনের মধ্যে জমা দিয়ে পেয়ে যাবে পুরুস্কার।
প্রতি বছর একটি স্থানে উৎসবটি হলেও এবার ইউনিয়নের কালী বাড়ী, বৈরাগখালী ও বাটারাবাদ গ্রামের মানুষ এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। পাচঁ দিন আগ থেকে পিঠা উৎসব পালনের প্রস্তুতি শুরু করে এখানকার নারীরা। রবিবার (১৫ জানুয়ারী) ভোর থেকে শুরু করে পিঠা তৈরীর কাজ, চলে রাত পর্যন্ত। সারিবদ্ধ ভাবে চুলা তৈরী করে গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারীরা পিঠা তৈরীর শুরু করেন। পরে তাবু টানিয়ে গভির রাত পর্যন্ত সবাই সারিবন্ধ ভাবে বসে চলে পিঠা খাওয়ার আয়োজন। মুলত পিঠার সঙ্গে পৌষ সংক্রান্তি শব্দটি অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এটি। তাই অনেকেই এই দিনের আগে পিঠা খান না, আর তাই সংক্রান্তি পিঠা উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে এখানে সকল ধর্মের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ এসে সকলে মিলেমিশে পিঠা খেতে দেখা যায়।
আয়োজক কমিটির সভাপতি তৃষ্ণা বিশ্বস বলেন, প্রথমে যখন শুরু করার কথা ভাবলাম, তখন চিন্তা করলাম গ্রামে অনেক মানুষ আছে যারা পৌষের পিঠা খাওয়ার মতো সামর্থ নেই। আমি একা পৌষ পার্বণ পালন করবো আর আমাদের পাশের অসহায় মানুষগুলো খাবেনা এটা চিন্তাও করা যায়না। তাই আমার সহপাঠিদের নিয়ে গ্রামের বিত্তবানদের সাথে আলোচনা করে সকলের সহায়তায় এ উৎসবের আয়োজন করি। যাতে হিন্দু- মুসলিম, খ্রিষ্টিয়ান, বৈদ্য সহ সকল ধর্মের ধনী-গরীব সকলেই একই জায়গায় বসে আমরা এ আনন্দ উপভোগ করতে পারি এ জন্যই পিঠা উৎসবের আয়োজন। আমি সার্থক, আমি, পেরছি সকল ধর্মের ভেদাবেদ ভুলে একই তাবুর নিচে একাত্রিত হতে।
বাজুয়া এলাকা থেকে আসা আজাহারু ইসলাম নামের একজন বলেন, বাঙ্গালীর ঐতিহ্য পিঠার স্বাদ গ্রহণ না করলে বোঝা যাবে না। বাঙ্গালী যেন ভোজন রসিক পিঠা উৎসব তার উদাহরণ, তাই বাঙ্গালির চিরাচরিত ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতেই আর পৌষ সংক্রান্তি পালন করার জন্যই এ আয়োজন।
বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস বলেন, ৬ বছর পূর্বে থেকে মোংলার বুড়িরডাঙ্গায় এলাকায় শুরু হয় পিঠা উৎসবের আয়োজন। প্রতি বছর একটি স্থানে এ আয়োজন সিমাবদ্ধ থাকলেও এবার তিনটি স্থানে এক সাথে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ আয়োজন ছড়িয়ে দেওয়া হবে পুরো উপজেলা ব্যাপি। তাই সকলের মিলনমেলার এ পিঠা উৎসবটি মোংলা উপজেলার সকল ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়–ক এমনটাই আশা করছেন এলাকার ভোজর রসিকরা।