রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায় অবস্থিত ৭ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসার নড়বড়ে সাঁকোটি পদ্মায় নিখোঁজ রবিনের মরদেহ দেখতে আসা অতিরিক্ত মানুষের চাপে মাঝ বড়াবড় বাঁশের খুটি ভেঙ্গে হেলে পড়েছে । এতে ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকোটি দিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হওয়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, কিষাণ-কিষাণি ও হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।
স্থানীয়রা জানান, মূল পদ্মার শাখা নদীর দুই পাড় দৌলতদিয়া নুরু মন্ডল পাড়া ও ইদ্রিস মিয়ার পাড়া। এছাড়াও ওপাড়ে রয়েছে ১ নং বেপারী পাড়া, সাহাজুদ্দিন বেপারী পাড়া, লালু মন্ডলের পাড়া, নাসির সরদারের পাড়া এবং দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি পাড়ার মানুষের যাতায়াতের দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০১৮ সালে তৎকালীন ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রয়াত পান্নু মোল্লার নিজস্ব অর্থায়নে এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি নিজে ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সাঁকোটি নির্মাণ করেন। এরপর ২০২২ সালে সাঁকোটির বিভিন্ন স্থানে বাঁশ-খুটি পঁচে নষ্ট হয়ে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়লে দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল ও ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আয়ুব আলী খান সাঁকোটি পূনঃনির্মাণ করেন।
বর্তমানে সাঁকোটি নড়বড়ে হলেও যাতায়াত করা যেতো। কিন্তূ গত মঙ্গলবার সকালে পদ্মায় গোসল করতে গিয়ে রবিন নামের এক শিশু নিখোঁজ হয়। গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের একটি টিম, ডুবুরি দল ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বুধবার বিকেলে নিখোঁজ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার অভিযান ও শিশুটির মরদেহ দেখতে আসা অতিরিক্ত মানুষের চাপেই মুলত বাঁশের সাঁকোটি মাঝ বড়াবড় খুটি ভেঙ্গে হেলে পড়ে। এখন সাঁকোটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তা স্বত্ত্বেও উপায় না থাকায় কেও কেও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সাঁকোটির উপর দিয়ে চলাচল করছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাঁকোটি ভেঙ্গে হেলে পড়ায় পারাপারের সময় সাঁকোটি কাঁপতে থাকে। ভগ্নপ্রায় এ সাঁকোটি অতি কষ্টে ব্যাপক সাবধানতা অবলম্বন করে কিছু মানুষ পারাপার হতে পারলেও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আর সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষিপন্য পরিবহনকারী কৃষাণ-কৃষাণীরা।
এই সাঁকো দিয়ে নিয়মিত পারাপার হওয়া বড় সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রেবেকা আক্তার বলেন, এমনিতেই সাঁকোটি নড়বড়ে। তার উপর আবার খুটি ভেঙ্গে হেলে পড়েছে। এখন স্কুলে যাওয়া-আসাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটা কবে ঠিক হবে, আবার কবে স্বাভাবিক ভাবে স্কুলে যেতে পারবো জানিনা।
সাঁকো পার হওয়া ইদ্রিস মিয়া পাড়ার বাসিন্দা আইজুদ্দিন প্রামাণিক বলেন, এই খালের উপর দিয়ে সেতু নির্মাণ এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোন উদ্যোগ নেয়নি। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচন শেষ হলে আর কারও মনেও থাকে না।
একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের মত বয়স্ক মানুষের পক্ষে এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টের। তার উপর আবার খুটি ভেঙ্গে সাঁকোটি হেলে পড়েছে। যে কোন সময় পুড়ো সাঁকোটি ভেঙ্গে বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এভাবে বারবার সাঁকোটি সংস্কার না করে অস্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
শাহজুদ্দিন বেপারী পাড়ার বাসিন্দা মেজেক বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, এই সাঁকো দিয়ে ৭ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। গুরুত্বের বিবেচনায় এখান দিয়ে সেতু হওয়ার কথা থাকলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে এখানে সেতু না দিয়ে, সেতু নির্মাণ করেছে নাসির সরদার পাড়া এলাকায়। সেখান দিয়ে শুধুমাত্র ওই এলাকার মানুষজনই চলাচল করে।
দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাঁকোটি মেরামতের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। এছাড়া ওই স্থানে সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার মানুষকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী মো.বজলুর রহমান জানান, আমরা ইতিমধ্যে সয়েল টেষ্ট করে সেখানে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বরাবর পাঠিয়েছি। এতে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যায় ধরা হয়েছে। নদী ভাঙ্গন নিয়ে একটা শঙ্কা রয়েছে তবে এখানে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হলে সেতু নির্মাণ সহজ হবে।