আবারও হুমকির মুখে মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেল ড্রেজিংয়ের কাজ
- আপডেট সময় : ০৮:২৫:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৭৮ বার পড়া হয়েছে
ফের হুমকির মুখে মোংলা বন্দরের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। দীর্ঘদিন এ কাজের ধীর গতি হওয়ার পরে বালু ফেলার জন্য পুনরায় জমি হুকুম দখল করতে গেলে জমির মালিকরা হুকুম দখলে পরিবর্তে অধিগ্রহন করে নেয়ার জন্য আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। করছে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন।
দেশের দ্বিতীয় মোংলা সমুদ্র বন্দরকে সচল রাখতে পশুর নদীর নৌ চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের একটি বড় বিকল্প গ্রহন করেণ সরকার। এ জন্য ২০২০ সালে একনেকে অনুমোদন হয় ৭শ ৯৪ কোটি টাকার ড্রেজিং প্রকল্প। পরে সেই প্রকল্প অনুমোদন হলে ২০২১ সালের ১৩ মার্চ বন্দরের পশুর নদীতে ইনারবার ড্রেজিংয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্ধেধন করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সহ স্থানীয় নেত্রবৃন্দরা।
বন্দর সুত্রে জানা যায়, মোংলা সমুদ্র বন্দরকে সচল রাখতে পশুর চ্যানেল ড্রেজিংয়ের আওতায় নদীর ২৪ কিলোমিটার নৌ পথ খননের প্রয়োজন দেখা দেয়। তবে শুরু থেকে এ ড্রেজিং কাজের প্রথমে ২৪ কিলোমিটার নৌ পথ খননের ৩০ শতাংশের বেশি কাজ করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জায়গা না মেলায় বাকি থাকে ৭০ শতাংশ খনন কাজ থমকে আছে। খনন কাজের পুরোটাই এখন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই অনিশ্চয়তা থেকে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলতে গত বছর পশুর নদীর পাড়ের বানিশান্তা এলাকায় বিকল্প জায়গা খুঁজে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলা কার্যক্রম শুরু করতে গেলে স্থানীয় কৃষি জমির মালিকদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তিন ফসলি কৃষি জমি দাবী করে কোন রকম বালু মটি ফেলতে দেওয়া হবেনা, এমন দাবিতে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে ড্রেজিং কার্যক্রম স্থগিত করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে সরে আসে।
তবে আবার নতুন করে ৮৬২ একর জায়গা নির্ধারন করা হয় উপজেলার কাইনমারী, বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের সানবান্দা সহ কয়েকটি এলাকায়। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। মাটি ফেলতে নতুন করে ৮৬২ একর কৃষি জমি হুকুম দখলের ঘোষনায় জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আর কৃষিজমি হুকুম দখলের প্রতিবাদে ‘জমি দেবোনা, প্রয়োজনে রক্ত দেব’ এমন কড়া বার্তা নিয়ে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দ্বিগরাজ বাজার এলাকার রাস্তায় দাড়িয়ে যায় শত শত নারী পুরুষ। এদিন বেলা ১১টায় মোংলা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদী বিভিন্ন হুশিয়ারিমূলক বার্তার প্লেকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
এসময় বক্তব্য রাখেন কৃষি জমির মালিক বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আ’লীগ নেত্রী হোসনেয়ারা মিলি, বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ^াস, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি অর্ধেন্দু শেখর বিশ্বাস, পৌরসভার ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার, সুদিপ সরকার, যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি প্রাণেশ সরকার ও সিপিবি নেতা সুশান্ত দাশ সহ আরো অনেকে।
তারা বলেন, বন্দর জমি হকুমদখলে নিলে এ এলাকার প্রায় ৫শ’একর জমিতে বালু ফেলে ভরাট করা হলে চিংড়ি ও কৃষি চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। পেশা হারিয়ে নিঃস্ব হবে শত শত পরিবার। সরকারের মাধ্যমে বন্দর উন্নয়ন হউক তা তারা চায় তবে হুকুম দখল নয় অধিগ্রহন করে নেয়ার দাবী জানায় জমির মালিকরা। এদিকে তাদের এই প্রতিরোধে নতুন করে মোংলা বন্দরের নৌ চ্যানেল খননে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে ৭শ ৯৪ কোটি টাকার ড্রেজিং কার্যক্রম।
এসব উল্লেখ করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং প্রকল্পের প্ররিচালক মোঃ শওকত আলী বলেন, মোংলা বন্দরকে সচল রাখতে হলে পশুর নদীর ড্রেজিংয়ের বিকল্প নাই। এ জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে গত ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অরবিন্দু বিশ্বাস, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপংকার দাস, সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ হাবিবুর রহমান সহ উর্ধতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান জমি হুকুম দখল বিষয় আরোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে সেখানে সকলকে নিয়ে ফলপ্রসু সমজোতাও হয় এবং বালু ফেলার জন্য জমির মালিকদের সম্মতিও থাকে। কিন্ত এখন কিছু কুট কৌশলী লোকজন পুনরায় বন্দর চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য আবার ব্যাঘাত সৃস্টি করতে চাচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জায়গা না পেলে নতুন করে আবারও সংকট তৈরি হবে। এতে মোংলা বন্দরের একটি বড় প্রকল্পের ক্ষতির পাশাপশি দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি হবে বলে জানায় তিনি।##