“মা, আমার জন্য দোয়া করো, আন্দোলনে যাচ্ছি”: শহীদ সাগর
জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
- আপডেট সময় :
০২:৪৩:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
১৮
বার পড়া হয়েছে
{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"transform":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News) ফিডটি
‘বিকেল সাড়ে পাঁচটার মতো বাজে। ছেলে সাগর ফোনে জানায়, “আব্বু, আমাদের এখানকার অবস্থা ভালো না। আমাকে বিকাশে এক হাজার টাকা পাঠাও। আমি বললাম, সাবধানে থাকো।” ফোন শেষ করে নারুয়া বাজারে যাই। টাকা পাঠিয়ে নিশ্চিত হতে ফোন করি, কিন্তু সে আর ফোন ধরে না। তখন থেকে বুকটা কেমন যেন কাঁপছিল।’
মাগরিবের নামাজ শেষ করে পকেটে ফোন বেজে ওঠে। মেয়ে মুসমি ফোন করে বলে, “আব্বু, বাড়ি আসো।” বাড়ি এসে দেখি সবাই চুপচাপ। পরে নাতি বলে, সাগরের মাথায় গুলি লেগেছে, সে হাসপাতালে আছে।
কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার মিরপুর গোল চত্বরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাগরের বাবা, কৃষক তোফাজ্জল হোসেন।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সাগর আহম্মেদ (২২) মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরদিন ২০ জুলাই সন্ধ্যায় নিজ গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
প্রায় ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও সাগরের বাড়িতে এখনো শোকাবহ পরিবেশ। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সাগরের মা গোলাপি বেগম শয্যাশায়ী, বাবা তোফাজ্জল হোসেন ও সাগরের ছোট বোন মুসমি শোকাচ্ছন্ন।
স্বজনরা জানান, সাগর মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তো। তার বোন মুসমি নারুয়া লিয়াকত আলী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। সাগরের স্বপ্ন ছিল বোনকে ঢাকায় নিয়ে পড়াবে।
তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “সাগর বলতো, আব্বু, তোমাকে আর মাঠে কাজ করতে হবে না, আমি চাকরি করে তোমাদের ঢাকায় নিয়ে যাব।” একথা বলে তিনি কাঁদতে থাকেন। ১৯ জুলাই সকালেও কথা হয় সাগরের সঙ্গে। তখন সাগর মাকে বলে, “মা, আমার জন্য দোয়া করো, আন্দোলনে যাচ্ছি।” মা নিষেধ করলে সে বলে, “মা, তোমার সাগরের জন্য না, লক্ষ সাগরের জন্য দোয়া কোরো।”
বোন মুসমি জানায়, সাগর একসময় নৌবাহিনীতে সৈনিক পদে পরীক্ষা দিয়েছিল, কিন্তু কোটার কারণে চাকরি হয়নি। এরপর থেকে তার মনে কষ্ট ছিল।
সাগরের চাচাতো ভাই মাসুদ হোসেন বলেন, ১৯ জুলাই জুমার নামাজ শেষে সাগর বড় ভাই সাইফুলকে জানায়, অনেকেই আন্দোলনে যাচ্ছে, সে-ও যাবে। বিকেল সাড়ে ৫টায় একাই বের হয়। সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোনে জানানো হয় যে সাগর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরদিন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পরিচয়পত্র দেখে সাগরের লাশ শনাক্ত করা হয়।
সাগরের চাচা, নারুয়া মুনছুর আলী কলেজের সহকারী অধ্যাপক একেএম আসাদুজ্জামান বলেন, “২০ জুলাই রাতে গ্রামের কবরস্থানে সাগরের লাশ দাফন করা হয়। পরিবারের শোক এখনো কাটেনি। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, পরিবারটির কথা বিবেচনা করে যেন সহায়তা করা হয়।”
নিউজটি শেয়ার করুন