“দুই হাত জোর করে অসুস্থ্য বলা সত্ত্বেও রক্ষা পায়নি কুরবান শেখ”
জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
- আপডেট সময় :
০৩:০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
১৫
বার পড়া হয়েছে
{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"transform":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News) ফিডটি
“আমার আব্বুর কি দোষ ছিল। আব্বু শারীরিকভাবে অসুস্থ্য। সংঘর্ষ দেখে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিলেন। সে বার বার দুই হাত জোড় করে জীবন ভিক্ষা চেয়ে আকুতি করেছিলেন। সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা, স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতেও পারে না। অসুস্থ্য বলা সত্ত্বেও তাকে কেন গুলি করে মারলো? আমার আব্বুরে এখন কই পাবো।”
আবেগ আপ্লুত হয়ে বলছিল গত ২০ জুলাই ঢাকার সাভার বাসষ্ট্যান্ডে গুলিতে নিহত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কুরবান শেখের (৪৯) মেয়ে স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিতু আক্তার মিতা।
কুরবান শেখ রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পূর্ব রতনদিয়া গ্রামের মৃত মেহের শেখের ছেলে।
কুরমান শেখের পরিবার জানায়, কালুখালী রতনদিয়া রেললাইনের পাশে জড়াজীর্ণ টিনের ঘর ছাড়া কিছুই নেই। অভাব অনটনের কারনে সন্তানদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে সাভার বাসষ্ট্যান্ডে একটি ছোট্ট ঘরে দৈনিক ভাড়া ভিত্তিতে মুরগির ব্যবসা করতেন। সাভার মাছ বাজার পিছনে ভাড়া বাসায় স্ত্রী শিল্পী খাতুন, ছেলে রমজান শেখ ও মেয়ে মিতু আক্তার মিতাকে নিয়ে বাস করতেন তিনি।
ছেলে রমজান শেখ (২২) ২০১৭ সালে সাভার সুকুরজান জিন্নাত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করে। ২০১৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়াশুনা করছে। মেয়ে মিতু আক্তার মিতা (২০) সাভার চাপাই নিউ মডেল হাইস্কুল থেকে ২০২০ সালে বাণিজ্য বিভাগে-এ গ্রেড পেয়ে এসএসসি পাশ করে। ২০২২ সালে সাভার লিজেন্ড কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ-এ গ্রেডে পাশ করে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করছে।
মিতু আক্তার জানায়, ২০ জুলাই দুপুর ১২টার পর থেকে সাভার বাসষ্ট্যান্ডে গুলাগুলির আওয়াজ পেয়ে ভয় পাই। পৌনে ১টার দিকে বাবাকে ফোন করে দ্রুত বাসায় আসতে বলি। বাবা শুধু জানায়, ‘অবস্থা ভালো না, দোকান বন্ধ করে আসছি’। এই ছিল আব্বুর সাথে আমার শেষ কথা। আব্বু তো বাসায় ফিরছিল। তাহলে কেন গুলি করে মারলো? আমার আব্বু অসুস্থ্য মানুষ।
স্ত্রী শিল্পী খাতুন বলেন, আমার স্বামী শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে প্রতিবন্ধী ভাতাও পান। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না, ঠিকমতো হাটতেও পারেন না। ছেলেকে বিসিএস ক্যাডার এবং মেয়েকে ব্যাংকার বানাবে বলে অনেক কষ্ট করতো। সে কোন দল করতো না। আমার স্বামী দুই হাত জোর করে পুলিশের কাছে বলছিল, “স্যার আমি অসুস্থ্য, ব্যবসা করে খাই, আমারে গুলি কইরেন না”। তারপর কেন গুলি করে মারলো? দুই ছেলে মেয়ে পড়াশুনায় ভাল বলে অনেক কষ্ট করতো। আমার ছেলে মেয়ের দায়িত্ব কে নিবে। কিভাবে পড়াশুনার খরচ চালাব। সাভার ফিরলেই বাসা ভাড়া দিতে হবে। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমি সকলের সহযোগিতা চাই।
ছেলে রমজান শেখ বলেন, ওইদিন সকালে আব্বু বলছিল, সবাই দোকানপাট খুলছে আমিও দোকান খুলি। এ কথা বলেই বাসা থেকে বের হয়। দুপুরে সংঘর্ষ শুরু হলে আব্বু দোকান বন্ধ করে পিছনের মাছ বাজার এলাকার বরফ কলের ভিতর আশ্রয় নেয়। এসময় অনেকে সেখানে আশ্রয় নেয়। আমার এক চাচাও ছিল। পুলিশ হঠাৎ বাজারে ঢুকে বরফ কলের কাছে এসেও গুলি শুরু করে।
দুপুর পৌনে দুইটার দিকে চাচা ফোনে জানায়, আব্বুকে গুলি করেছে। এসে দেখি আব্বুকে রক্তাত্ব অবস্থায় কয়েকজন ধরে নিচ্ছে। দ্রুত সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক জানায় বেঁচে নেই। আব্বুর বুকের বাম দিকে ও ডান পায়ের হাটুর নিচে গুলি লাগে। মুখের বাম দিকে ছড়রা গুলির ক্ষত। পরে রাত ৯টার দিকে গ্রামের বাড়ি কালুখালী আসি। রাত ১১টার দিকে স্থানীয় কবর স্থানে জানাযা শেষে দাফন করা হয়।
কুরমান শেখের বড় ভাই ছাত্তার শেখ বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে সাকো থেকে পড়ে কুরমান কোমড়ে আঘাত পান। এরপর থেকে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেনা। দুর্ঘটনার ৩-৪ বছর পর সাভার ব্যবসা শুরু করেন।
নিউজটি শেয়ার করুন