বেতন ভাতা ফেরতের নির্দেশ বহাল থাকা শিক্ষক সুরাইয়া হলেন সাতক্ষীরা এড. আ: রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০১:৩৮:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩৪ বার পড়া হয়েছে

জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হওয়ায় বেতন-ভাতা ফেরতের নির্দেশ বহাল থাকা শিক্ষক সুরাইয়া সুলতানা হয়েছেন সাতক্ষীরার এড. আব্দুর রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তার চাকরি অবৈধ হওয়ার কথা, তবে কীভাবে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী জানান, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদকে সরিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ২০তম প্রভাষক সুরাইয়া সুলতানাকে গত ২৬ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন কলেজ পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুরাইয়া সুলতানার চাকরিই থাকে না। তার উত্তোলিত বেতন-ভাতা ফেরতের নির্দেশনা ২০১৭ সালেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততায় তিনি এখনও বহাল রয়েছেন।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে সুরাইয়া সুলতানা ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তবে পরে তৎকালীন অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামানের সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে এমপিওভুক্ত হন। ২০০৭ সালের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে দেখা যায়, তিনি ২০০২ সালের ২৫ জুলাই ইতিহাস বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কিন্তু ২০০৬ সালে গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে এমপিওভুক্ত হন, যা সম্পূর্ণভাবে প্রাপ্যতাবিহীন। এ ঘটনায় তাকে সরকারি কোষাগারে উত্তোলিত সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সুরাইয়া সুলতানা প্যাটার্নবহির্ভূত শিক্ষক হওয়ায় ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তোলিত ৭৭,৯৪০ টাকা এবং পরবর্তী সময়ের অর্থও ফেরতযোগ্য। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।

২০১৭ সালের ২ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০০৩২০১৪.৩৩৮ নং স্মারকে উল্লেখ করে সুরাইয়া সুলতানাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে পিডিআর অ্যাক্ট, ১৯১৩ অনুযায়ী মামলা দায়ের এবং উত্তোলিত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে মো. হুমায়ূন কবির (প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস) ও শাহজাহান কবির (প্রভাষক, ভূগোল) এর মতো আরও কয়েকজন শিক্ষকের এমপিওভুক্তি নিয়েও অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুরাইয়া সুলতানা বলেন, “এখন একটি মিটিংয়ে আছি, এসব বিষয়ে পরে কথা বলা যাবে।”

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বেতন ভাতা ফেরতের নির্দেশ বহাল থাকা শিক্ষক সুরাইয়া হলেন সাতক্ষীরা এড. আ: রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

আপডেট সময় : ০১:৩৮:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হওয়ায় বেতন-ভাতা ফেরতের নির্দেশ বহাল থাকা শিক্ষক সুরাইয়া সুলতানা হয়েছেন সাতক্ষীরার এড. আব্দুর রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তার চাকরি অবৈধ হওয়ার কথা, তবে কীভাবে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী জানান, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদকে সরিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ২০তম প্রভাষক সুরাইয়া সুলতানাকে গত ২৬ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন কলেজ পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুরাইয়া সুলতানার চাকরিই থাকে না। তার উত্তোলিত বেতন-ভাতা ফেরতের নির্দেশনা ২০১৭ সালেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততায় তিনি এখনও বহাল রয়েছেন।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে সুরাইয়া সুলতানা ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তবে পরে তৎকালীন অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামানের সহযোগিতায় জালিয়াতির মাধ্যমে গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে এমপিওভুক্ত হন। ২০০৭ সালের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে দেখা যায়, তিনি ২০০২ সালের ২৫ জুলাই ইতিহাস বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কিন্তু ২০০৬ সালে গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে এমপিওভুক্ত হন, যা সম্পূর্ণভাবে প্রাপ্যতাবিহীন। এ ঘটনায় তাকে সরকারি কোষাগারে উত্তোলিত সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সুরাইয়া সুলতানা প্যাটার্নবহির্ভূত শিক্ষক হওয়ায় ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তোলিত ৭৭,৯৪০ টাকা এবং পরবর্তী সময়ের অর্থও ফেরতযোগ্য। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।

২০১৭ সালের ২ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০০৩২০১৪.৩৩৮ নং স্মারকে উল্লেখ করে সুরাইয়া সুলতানাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে পিডিআর অ্যাক্ট, ১৯১৩ অনুযায়ী মামলা দায়ের এবং উত্তোলিত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে মো. হুমায়ূন কবির (প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস) ও শাহজাহান কবির (প্রভাষক, ভূগোল) এর মতো আরও কয়েকজন শিক্ষকের এমপিওভুক্তি নিয়েও অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুরাইয়া সুলতানা বলেন, “এখন একটি মিটিংয়ে আছি, এসব বিষয়ে পরে কথা বলা যাবে।”

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।