০৯:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজ বুদ্ধিতেই অপহরণকারী চক্রের খপ্পর থেকে রক্ষা পেল নবম শ্রেনীর ছাত্রী

নিজ বুদ্ধিতেই অপহরণকারী চক্রের খপ্পর থেকে রক্ষা পেল নবম শ্রেনীর ছাত্রী

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজ বুদ্ধিতেই অপহরণকারী চক্রের খপ্পর থেকে রক্ষা পেয়েছে নবম শ্রেনীর স্কুলছাত্রী জান্নাতুন নেছা তানহা (১৪)। সে গোয়ালন্দ পৌরসভা ৩নম্বর ওয়ার্ডের নছর উদ্দিন সরদার পাড়ার এলেম মৃধা ও ফরিদা খাতুন দম্পতির একমাত্র মেয়ে। তানহা গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী।
গত রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০গজ দূরে উজানচর ইউনিয়নের কুন্ডুপাড়া এলাকায় খালু মিরাজের বাড়িতে খালাতো ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। পথিমধ্যে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ রেলগেট নামক স্থান থেকে তানহাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তাদের বাড়িতে আলাপকালে তানহা জানায়, রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বের হই। মাঝপথে গোয়ালন্দ রেলগেট পার হওয়ার পর স্থানীয় আব্দুল মান্নানের বহুতল ভবনের সামনে নীল রঙের একটি মাইক্রোবাস পথরোধ করে দাড়ায়। ওই মাইক্রোবাসে বোরকা পড়া এক যুবতীসহ তিন তরুণ ছিল। ওই নারী গাড়ি থেকে নেরেম এসে নাম জিজ্ঞাসা করে আচমকা আমার নাকে মুখে রুমাল ধরে টান দিয়ে গাড়িতে তুলেই দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের দিকে রওয়ানা করে। এসময় কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগটি পড়ে যায়। তাকে মাঝে রেখে ডানপাশে ওই নারী এবং বাম পাশে এক তরুণ বসা ছিল। এরপর সে অচেতন হয়ে পড়ে।
তানহা আরো জানায়, দুপুর বারোটার দিকে নবীনগর নামক একটি স্থানে হঠাৎ করে জ্ঞান ফিরলে দেখতে পাই ওই নারী তার ডান হাত ধরে আছেন, গাড়িটি নির্জন স্থানে দাড়িয়ে আছে। বাম পাশের তরুণটি নেই, গাড়ির দরজা খোলা। এমনকি গাড়ির ড্রাইভারসহ অন্য তরুনটিও নেই। এমতাবস্থায় ওই যুবতীকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে প্রায় ২০মিনিট দৌড়ে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেই। এসময় স্থানীয় বয়স্ক এক ব্যক্তির কাছে ঘটনা খুলে বলি। এসময় অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু নেয়া অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যক্তি বাবা-মাকে ফোনে বিষয়টি জানান। রাতেই বাবা-মার সাথে বাড়িতে ফিরে আসি।
নবীনগর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার অনামিকা হেয়ার ড্রেসার সেলুন এর সত্ত¡াধিকারী স্বপন চন্দ্র শীল মুঠোফোনে জানান, আমি চা খাচ্ছিলাম। এসময় অল্প বয়সের ওই মেয়েকে আতঙ্কগ্রস্ত দেখে কি হয়েছে জানতে চাই। পরে বিষয়টি খুলে বললে তার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে তার বাবা-মাকে ফোন দেই এবং তারা এখানে এসে পৌছালে তাদের হাতে ওই মেয়েকে তুলে দেই।
মা ফরিদা খাতুন জানান, বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফিরে না আসায় বোনের কাছে ফোন করে জানতে পারি তানহা প্রাইভেট পড়তে যায়নি। তখন সবাই বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিতে থাকলে পথিমধ্যে স্কুল ব্যাগ পড়ে থাকার বিষয়টি জানতে পেরে ধারণা করে ওকে (তানহা) হয়ত অপহরণ করা হয়েছে। তাৎক্ষনিক ৯৯৯-এ ফোন করি এবং গোয়ালন্দ ঘাট থানায় গিয়ে তাদেরকে অবগত করি। এসময় নবীনগর থেকে ওই ব্যক্তি (স্বপন চন্দ্রশীল) আমার নাম্বারে ফোন করলে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ডিউটি অফিসার এসআই সালমা খাতুন তার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা দ্রুত নবীনগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই।
বাবা এলেম মৃধা বলেন, আমি ঢাকার গাবতলী এলাকায় ছিলাম খবর পেয়ে দ্রুত নবীনগর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় পৌছে তানহাকে পাই। আমার একমাত্র মেয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পায়। কিন্তু দিনের বেলায় মহাসড়ক থেকে এভাবে তুলে নেয়ায় মেয়েকে নিরাপদে পড়ানো নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে স্কুলছাত্রীর পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

নিজ বুদ্ধিতেই অপহরণকারী চক্রের খপ্পর থেকে রক্ষা পেল নবম শ্রেনীর ছাত্রী

Update Time : ০৯:০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজ বুদ্ধিতেই অপহরণকারী চক্রের খপ্পর থেকে রক্ষা পেয়েছে নবম শ্রেনীর স্কুলছাত্রী জান্নাতুন নেছা তানহা (১৪)। সে গোয়ালন্দ পৌরসভা ৩নম্বর ওয়ার্ডের নছর উদ্দিন সরদার পাড়ার এলেম মৃধা ও ফরিদা খাতুন দম্পতির একমাত্র মেয়ে। তানহা গোয়ালন্দ শহীদ স্মৃতি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী।
গত রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০গজ দূরে উজানচর ইউনিয়নের কুন্ডুপাড়া এলাকায় খালু মিরাজের বাড়িতে খালাতো ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। পথিমধ্যে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ রেলগেট নামক স্থান থেকে তানহাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তাদের বাড়িতে আলাপকালে তানহা জানায়, রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বের হই। মাঝপথে গোয়ালন্দ রেলগেট পার হওয়ার পর স্থানীয় আব্দুল মান্নানের বহুতল ভবনের সামনে নীল রঙের একটি মাইক্রোবাস পথরোধ করে দাড়ায়। ওই মাইক্রোবাসে বোরকা পড়া এক যুবতীসহ তিন তরুণ ছিল। ওই নারী গাড়ি থেকে নেরেম এসে নাম জিজ্ঞাসা করে আচমকা আমার নাকে মুখে রুমাল ধরে টান দিয়ে গাড়িতে তুলেই দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের দিকে রওয়ানা করে। এসময় কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগটি পড়ে যায়। তাকে মাঝে রেখে ডানপাশে ওই নারী এবং বাম পাশে এক তরুণ বসা ছিল। এরপর সে অচেতন হয়ে পড়ে।
তানহা আরো জানায়, দুপুর বারোটার দিকে নবীনগর নামক একটি স্থানে হঠাৎ করে জ্ঞান ফিরলে দেখতে পাই ওই নারী তার ডান হাত ধরে আছেন, গাড়িটি নির্জন স্থানে দাড়িয়ে আছে। বাম পাশের তরুণটি নেই, গাড়ির দরজা খোলা। এমনকি গাড়ির ড্রাইভারসহ অন্য তরুনটিও নেই। এমতাবস্থায় ওই যুবতীকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে প্রায় ২০মিনিট দৌড়ে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেই। এসময় স্থানীয় বয়স্ক এক ব্যক্তির কাছে ঘটনা খুলে বলি। এসময় অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু নেয়া অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যক্তি বাবা-মাকে ফোনে বিষয়টি জানান। রাতেই বাবা-মার সাথে বাড়িতে ফিরে আসি।
নবীনগর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার অনামিকা হেয়ার ড্রেসার সেলুন এর সত্ত¡াধিকারী স্বপন চন্দ্র শীল মুঠোফোনে জানান, আমি চা খাচ্ছিলাম। এসময় অল্প বয়সের ওই মেয়েকে আতঙ্কগ্রস্ত দেখে কি হয়েছে জানতে চাই। পরে বিষয়টি খুলে বললে তার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে তার বাবা-মাকে ফোন দেই এবং তারা এখানে এসে পৌছালে তাদের হাতে ওই মেয়েকে তুলে দেই।
মা ফরিদা খাতুন জানান, বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফিরে না আসায় বোনের কাছে ফোন করে জানতে পারি তানহা প্রাইভেট পড়তে যায়নি। তখন সবাই বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিতে থাকলে পথিমধ্যে স্কুল ব্যাগ পড়ে থাকার বিষয়টি জানতে পেরে ধারণা করে ওকে (তানহা) হয়ত অপহরণ করা হয়েছে। তাৎক্ষনিক ৯৯৯-এ ফোন করি এবং গোয়ালন্দ ঘাট থানায় গিয়ে তাদেরকে অবগত করি। এসময় নবীনগর থেকে ওই ব্যক্তি (স্বপন চন্দ্রশীল) আমার নাম্বারে ফোন করলে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ডিউটি অফিসার এসআই সালমা খাতুন তার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা দ্রুত নবীনগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই।
বাবা এলেম মৃধা বলেন, আমি ঢাকার গাবতলী এলাকায় ছিলাম খবর পেয়ে দ্রুত নবীনগর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় পৌছে তানহাকে পাই। আমার একমাত্র মেয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পায়। কিন্তু দিনের বেলায় মহাসড়ক থেকে এভাবে তুলে নেয়ায় মেয়েকে নিরাপদে পড়ানো নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে স্কুলছাত্রীর পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও আমি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো।