১২:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চালকের ভুলে সার নিয়ে ডুবে যায় লাইটার জাহাজটি

চালকের ভুলে সার নিয়ে ডুবে যায় লাইটার জাহাজটি।

মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া নৌ চ্যানেলে সার নিয়ে লাইটার জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় চালকের গাফিলতি পেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে এই তথ্য পেয়েছেন। এই প্রতিবেদন দু’ একদিনের মধ্যে তারা নৌপরিবহণ মন্ত্রনালয়ে পাঠাবে। এরপর গাফিলতির অভিযোগে দায়ী মাষ্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ।  তবে এই মুহুর্তে নৌ দূর্ঘটনায় বন্দরের নৌচ্যানেল নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি। 
ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বুধবার মধ্যরাতে হারবাড়িয়া-৮ এ সার নিয়ে ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজ এমভি শাহজালাল এক্সপ্রেসের মাষ্টার (চালক) ওবায়দুর রহমানের গাফিলতি পাওয়া গেছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন-ওই সময় ঘন কুয়াশা থাকায় মাষ্টারের উচিৎ ছিল লাইটার জাহাজটি না চালিয়ে কোন এক জায়গায় অবস্থান করা। কিন্ত মাষ্টার সেটি না করে ভুল সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী হারবাড়িয়া-৯ এ অবস্থান করা ‘এমভি ভিটা অলিম্পিক’ নামে বিদেশি জাহাজ থেকে ৫০০ টন সার বোঝাই করে ছেড়ে আসে। এরপরে পথিমধ্যে হারবাড়িয়া-৮ এ অবস্থান করা অন্য আরেকটি বিদেশি জাহাজ ‘সুপ্রিম ভ্যলো’র টার্ণ করার সময় ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেয়ে সেটিতে ধাক্কায় লাগায় শাহাজালাল এক্সপ্রেস লাইটারটি। ওই সময়ই দূর্ঘটনার কবলে পড়ে লাইটারটি ডুবে যায়।
এদিকে এ ঘটনায় বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কিন বয়া (লাল সতর্ক বয়া) বসিয়ে তদন্ত শুরু করে বন্দর কর্তৃপেক্ষের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শাহাদাৎ হোসেন, পাইলট ফারুক আহেম্মেদ এবং মেরিন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রিয়াদ খাঁন এই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
ডুবে যাওয়া লাইটার শাহাজালাল এক্সপ্রেসের মালিকানাধীণ প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই শিপিং লাইন্সের মালিক আজাহার সিদ্দিক দাবি করেন, ‘লাইটারটি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মাষ্টার ওবায়দুর রহমানের কোন গাফিলতি ছিলনা। সে একজন দক্ষ চালক। বন্দর কর্তৃপক্ষ দূর্ঘটনার যে কারণ উল্লেখ করেছেন তার ব্যাখা দিয়ে আজাহার সিদ্দিক বলেন, কোনও বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই হওয়ার পর সেখানে এক মূহুর্তে থাকতে দেওয়া হয়না, কাজেই সেখান থেকে অন্যত্র অবস্থান নেওয়ার জন্য ঘন কুয়াশায়ও মাষ্টারের লাইটারটি চালাতে হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে এই লাইটার জাহাজটি উঠানো সম্ভব না। অনেক সময় লাগবে। ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজ থেকে প্রাথমিকভাবে সার অপসারন করতেও এখনও এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম  বলেন, ‘সুন্দবনের অভ্যন্তরে হারবাড়িয়া নৌ চ্যানেলে সারবাহী লাইটার জাহাজ ডুবির ফলে জলজ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হবে এবং ওই জাহাজে থাকা যে জ¦ালানী তেল রয়েছে সেগুলো সুন্দরবনের আশেপাশের পরিবেশকে দূষন করবে। একই সঙ্গে বারবার এসব লাইটার জাহাজ ডুবির ফলে বন্দরের নাব্যতা সংকট বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি’।
উল্লেখ্য বুধবার মধ্য রাতে মোংলা বন্দরে দূর্ঘটনায় কবলিত হয়ে শাহাজালাল লাইটার জাহাজটি ডুবে গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ওই জাহাজে থাকা ৯ নাবিক। জাহাজটিতে বহন করা সার বাংলাদেশ এগ্রিকালচার কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বলে জানা গেছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

চালকের ভুলে সার নিয়ে ডুবে যায় লাইটার জাহাজটি

Update Time : ০২:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩
মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া নৌ চ্যানেলে সার নিয়ে লাইটার জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় চালকের গাফিলতি পেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে এই তথ্য পেয়েছেন। এই প্রতিবেদন দু’ একদিনের মধ্যে তারা নৌপরিবহণ মন্ত্রনালয়ে পাঠাবে। এরপর গাফিলতির অভিযোগে দায়ী মাষ্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ।  তবে এই মুহুর্তে নৌ দূর্ঘটনায় বন্দরের নৌচ্যানেল নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি। 
ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বুধবার মধ্যরাতে হারবাড়িয়া-৮ এ সার নিয়ে ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজ এমভি শাহজালাল এক্সপ্রেসের মাষ্টার (চালক) ওবায়দুর রহমানের গাফিলতি পাওয়া গেছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন-ওই সময় ঘন কুয়াশা থাকায় মাষ্টারের উচিৎ ছিল লাইটার জাহাজটি না চালিয়ে কোন এক জায়গায় অবস্থান করা। কিন্ত মাষ্টার সেটি না করে ভুল সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী হারবাড়িয়া-৯ এ অবস্থান করা ‘এমভি ভিটা অলিম্পিক’ নামে বিদেশি জাহাজ থেকে ৫০০ টন সার বোঝাই করে ছেড়ে আসে। এরপরে পথিমধ্যে হারবাড়িয়া-৮ এ অবস্থান করা অন্য আরেকটি বিদেশি জাহাজ ‘সুপ্রিম ভ্যলো’র টার্ণ করার সময় ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেয়ে সেটিতে ধাক্কায় লাগায় শাহাজালাল এক্সপ্রেস লাইটারটি। ওই সময়ই দূর্ঘটনার কবলে পড়ে লাইটারটি ডুবে যায়।
এদিকে এ ঘটনায় বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কিন বয়া (লাল সতর্ক বয়া) বসিয়ে তদন্ত শুরু করে বন্দর কর্তৃপেক্ষের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন শাহাদাৎ হোসেন, পাইলট ফারুক আহেম্মেদ এবং মেরিন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রিয়াদ খাঁন এই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
ডুবে যাওয়া লাইটার শাহাজালাল এক্সপ্রেসের মালিকানাধীণ প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই শিপিং লাইন্সের মালিক আজাহার সিদ্দিক দাবি করেন, ‘লাইটারটি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মাষ্টার ওবায়দুর রহমানের কোন গাফিলতি ছিলনা। সে একজন দক্ষ চালক। বন্দর কর্তৃপক্ষ দূর্ঘটনার যে কারণ উল্লেখ করেছেন তার ব্যাখা দিয়ে আজাহার সিদ্দিক বলেন, কোনও বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই হওয়ার পর সেখানে এক মূহুর্তে থাকতে দেওয়া হয়না, কাজেই সেখান থেকে অন্যত্র অবস্থান নেওয়ার জন্য ঘন কুয়াশায়ও মাষ্টারের লাইটারটি চালাতে হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে এই লাইটার জাহাজটি উঠানো সম্ভব না। অনেক সময় লাগবে। ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজ থেকে প্রাথমিকভাবে সার অপসারন করতেও এখনও এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম  বলেন, ‘সুন্দবনের অভ্যন্তরে হারবাড়িয়া নৌ চ্যানেলে সারবাহী লাইটার জাহাজ ডুবির ফলে জলজ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হবে এবং ওই জাহাজে থাকা যে জ¦ালানী তেল রয়েছে সেগুলো সুন্দরবনের আশেপাশের পরিবেশকে দূষন করবে। একই সঙ্গে বারবার এসব লাইটার জাহাজ ডুবির ফলে বন্দরের নাব্যতা সংকট বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি’।
উল্লেখ্য বুধবার মধ্য রাতে মোংলা বন্দরে দূর্ঘটনায় কবলিত হয়ে শাহাজালাল লাইটার জাহাজটি ডুবে গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান ওই জাহাজে থাকা ৯ নাবিক। জাহাজটিতে বহন করা সার বাংলাদেশ এগ্রিকালচার কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বলে জানা গেছে।