১২:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদপাই রেঞ্জে সুন্দরবনের গোলপাতা আহরণের প্রস্তুতি

চাঁদপাই রেঞ্জে সুন্দরবনের গোলপাতা আহরণের প্রস্তুতি।

পুর্ব বন বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্চে গোলপাতা আহরণ মৌসুম-২০২৩ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় পুর্ব সুন্দরবেনর চাঁদপাই রেঞ্চ অফিসে বাওয়ালিদের নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ২৯ জানুয়ারী বন বিভাগ থেকে অনুমতির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গোলপাতা আহরণ শুরু করা হবে। তাই গোলপাতা সংগ্রহের জন্য নৌকা ও বাওয়ালীদের বন বিভাগের সকল নিয়োম ও আইন সংক্রান্ত বিষয় বাওয়ালীদের বুঝিয়ে দেয়া হয় এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
বনের চাদঁপাই রেঞ্জ সুত্রে জানায়, চলতি বছর পুর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্চে ২ ও ৩ নং কুপ হতে আগামী (২৯ ফেব্রয়ারী থেকে ৩১ মার্চ) পর্যন্ত দু’মাস ব্যাপী বাওয়ালিরা সুন্দরবনে নির্ধারিত স্পট হতে গোলপাতা আহরণ করবেন। গোলপাতা আহরণ মৌসুম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন সহ বাওয়ালিদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয় রেঞ্জ অফিসের পক্ষ থেকে।
সুন্দরবনের চাঁদপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, পুর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্চে গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার কুইন্টাল (১৭ হাজার ৫শ মন) লক্ষ মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এবছর প্রতি কুইন্টালের জন্য রাজস্ব ধরা হয়েছে ৬০ টাকা এবং ভ্যাট সহ ৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি নৌকায় সর্বোচ্চ ২০০ কুইন্টাল (৫শ মন) গোলপাতা বহন করা যাবে। অতিরিক্ত বহন করলে বাওয়ালিদের কুইন্টাল প্রতি সরকারী নির্ধারিত থেকে অতিরিক্ত দ্বিগুন রাজস্ব আদায় করা হবে। পুর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জে দুইটি কম্পার্টমেন্ট এলাকা হতে গোলপাতা আহরণের স্পট নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে শেলা নদী ২নং-কম্পার্টমেন্ট থেকে ৪ হাজার কুইন্টাল ও চাদঁপাই ৩নং-কম্পার্টমেন্ট থেকে ৩ হাজার কুইন্টাল গোলপাতা সংগ্রহ করবে বাওয়ালীরা।
গোলপাতা ছাড়া বাওয়ালিরা সুন্দরবন হতে অন্য কোন কাঠ সংগ্রহ করতে পারবেন না। অবৈধভাবে কাঠ আহরণ কারীদের প্রতিটা হেতাল, গেওয়া বা অন্যান্য কাঠের জন্য সিওআর’র মাধ্যমে জরিমানা, কচিপাতা (হলুদ রঙের মাইজ পাতা) ২৫ টাকা, ঠেকপাতার জন্য ২৫ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তাছাড়া গোলপাতা কেটে নষ্ট করার জন্য ১০০ টাকা, গোলঝাড় নষ্ট হলে ১৫০ টাকা এবং গরানকাঠের লাঠি, সুন্দরী, পশুর ও অন্যান্য কাঠ কাটা, বন্যপ্রানী দরা, হত্যা বা বহন করার জন্য সরকারী নিয়োমানুযায়ী জরিমানা আদায় অথবা বন আইনে মামলাও করা হবে দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে। সুন্দরবনের বন্য প্রাণীর হামলা থেকে রক্ষাসহ গোলপাতা আহরণের নিয়মাবলী সম্পর্কে বাওয়ালিদের পর্যাপ্ত ধারণা দেওয়া হয়েছে। বনদস্যুদের হাত থেকে বাওয়ালিদের নিরাপত্তা দিতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বন রক্ষীদের অতিরিক্ত টহল থাকবে বলে তিনি জানান।
মোংলা উপক’লীয় জয়মনির ঘোল এলাকার বাওয়ালি আব্বাস ও নাসির সহ অনেকে বলেন,  সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের কূপগুলোতে পাতার পরিমাণ খুবই কম। এ ছাড়া অন্য বছর গোলপাতার নৌকায় ঝুল হিসেবে (ভারসম্য রক্ষা) বন থেকে কেটে নেওয়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ থেকেও বাওয়ালীদের আয় হতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তাও বন্ধ করে দিয়েছে বন বিভাগ, তাই গোলপাতা সংগ্রহের বাওয়ালীদের আগ্রহ খুবই কম। এছাড়া মানুষের মাঝে গোলপাতার চাহিদা কম, রাজস্ব বেশী, দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি, পাতা কাটার জন্য সময় মতো কাজের লোকের পারিশ্রমিক বেশী। তাই এবছর নৌকার সংখ্যাও কম।
তারা আরো বলেন, নতুন করে সুন্দরবনে ডাকাতের উৎপাত বেড়েছে। যা আয় করি তার বেশীর ভাগই বিভিন্ন ভাবে খরচ হয়ে যায়। আরা দীর্ঘদিন পর সুন্দরবনে নয়ন বাহিনী নামের নতুন করে একটি বনদস্য বাহিনী সুন্দরবনে দাপিয়ে বেরাচ্ছে। এ জন্য জেলে বাওয়ালীরা পুনরায় আতঙ্কিত হয়ে পরছে। তার পরেও জীবিকার তাগিদে পরিবার পরিজন ফেলে গোলপাতা আহরণের জন্য সুন্দরবনে যেতে হচ্ছে এসকল অসহায় গোলপাতা আহরণকারীদের। তাই গোলপাতা আহরণ মৌসুমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বনদস্যু সহ সার্বিক নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন বাওয়ালিরা।
পুর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের উদ্ভিদজাতীয় বনজ সম্পদ গোলপাতা। বনের অভ্যন্তরের নদী ও খালের পাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে প্রচুর পরিমাণ গোলগাছ। জানুয়ারীর শেষ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত গোলপাতা আহরণ মৌসুম। প্রতিবছর এই মৌসুমে বাগেরহাট সহ বিভিন্ন রেঞ্জে বাওয়ালীদের গোলপাতা আহরণ, পরিবহন ও বিক্রির কাজ করেন। চলতি মৌসুমে চাঁদপাই রেঞ্জের দুইটি কূপ থেকে ৭ হাজার কুইন্টাল (১৭ হাজার ৫শ মন) গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মাসে প্রথম দিকে বাওয়ালীরা পাশ নেয়ার কথা ছিল কিন্ত এবার অনেক দেরি করে পাস নিয়েছেন। এতে তাঁদের গোলপাতা সংগ্রহের পরিমাণ কম হবে। এই কারণে লক্ষমাত্রার রাজস্ব আদায়ও কম হওয়ার সম্ভাবনা। তার পরেও এ বছর রাজস্ব আদায় ও লক্ষ্যমাত্রার অর্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বন বিভাগ বলে জানায় তিনি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

চাঁদপাই রেঞ্জে সুন্দরবনের গোলপাতা আহরণের প্রস্তুতি

Update Time : ০২:৪২:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩
পুর্ব বন বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্চে গোলপাতা আহরণ মৌসুম-২০২৩ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় পুর্ব সুন্দরবেনর চাঁদপাই রেঞ্চ অফিসে বাওয়ালিদের নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ২৯ জানুয়ারী বন বিভাগ থেকে অনুমতির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গোলপাতা আহরণ শুরু করা হবে। তাই গোলপাতা সংগ্রহের জন্য নৌকা ও বাওয়ালীদের বন বিভাগের সকল নিয়োম ও আইন সংক্রান্ত বিষয় বাওয়ালীদের বুঝিয়ে দেয়া হয় এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
বনের চাদঁপাই রেঞ্জ সুত্রে জানায়, চলতি বছর পুর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্চে ২ ও ৩ নং কুপ হতে আগামী (২৯ ফেব্রয়ারী থেকে ৩১ মার্চ) পর্যন্ত দু’মাস ব্যাপী বাওয়ালিরা সুন্দরবনে নির্ধারিত স্পট হতে গোলপাতা আহরণ করবেন। গোলপাতা আহরণ মৌসুম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন সহ বাওয়ালিদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয় রেঞ্জ অফিসের পক্ষ থেকে।
সুন্দরবনের চাঁদপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, পুর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্চে গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার কুইন্টাল (১৭ হাজার ৫শ মন) লক্ষ মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এবছর প্রতি কুইন্টালের জন্য রাজস্ব ধরা হয়েছে ৬০ টাকা এবং ভ্যাট সহ ৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি নৌকায় সর্বোচ্চ ২০০ কুইন্টাল (৫শ মন) গোলপাতা বহন করা যাবে। অতিরিক্ত বহন করলে বাওয়ালিদের কুইন্টাল প্রতি সরকারী নির্ধারিত থেকে অতিরিক্ত দ্বিগুন রাজস্ব আদায় করা হবে। পুর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জে দুইটি কম্পার্টমেন্ট এলাকা হতে গোলপাতা আহরণের স্পট নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে শেলা নদী ২নং-কম্পার্টমেন্ট থেকে ৪ হাজার কুইন্টাল ও চাদঁপাই ৩নং-কম্পার্টমেন্ট থেকে ৩ হাজার কুইন্টাল গোলপাতা সংগ্রহ করবে বাওয়ালীরা।
গোলপাতা ছাড়া বাওয়ালিরা সুন্দরবন হতে অন্য কোন কাঠ সংগ্রহ করতে পারবেন না। অবৈধভাবে কাঠ আহরণ কারীদের প্রতিটা হেতাল, গেওয়া বা অন্যান্য কাঠের জন্য সিওআর’র মাধ্যমে জরিমানা, কচিপাতা (হলুদ রঙের মাইজ পাতা) ২৫ টাকা, ঠেকপাতার জন্য ২৫ টাকা জরিমানা দিতে হবে। তাছাড়া গোলপাতা কেটে নষ্ট করার জন্য ১০০ টাকা, গোলঝাড় নষ্ট হলে ১৫০ টাকা এবং গরানকাঠের লাঠি, সুন্দরী, পশুর ও অন্যান্য কাঠ কাটা, বন্যপ্রানী দরা, হত্যা বা বহন করার জন্য সরকারী নিয়োমানুযায়ী জরিমানা আদায় অথবা বন আইনে মামলাও করা হবে দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে। সুন্দরবনের বন্য প্রাণীর হামলা থেকে রক্ষাসহ গোলপাতা আহরণের নিয়মাবলী সম্পর্কে বাওয়ালিদের পর্যাপ্ত ধারণা দেওয়া হয়েছে। বনদস্যুদের হাত থেকে বাওয়ালিদের নিরাপত্তা দিতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে বন রক্ষীদের অতিরিক্ত টহল থাকবে বলে তিনি জানান।
মোংলা উপক’লীয় জয়মনির ঘোল এলাকার বাওয়ালি আব্বাস ও নাসির সহ অনেকে বলেন,  সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের কূপগুলোতে পাতার পরিমাণ খুবই কম। এ ছাড়া অন্য বছর গোলপাতার নৌকায় ঝুল হিসেবে (ভারসম্য রক্ষা) বন থেকে কেটে নেওয়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ থেকেও বাওয়ালীদের আয় হতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তাও বন্ধ করে দিয়েছে বন বিভাগ, তাই গোলপাতা সংগ্রহের বাওয়ালীদের আগ্রহ খুবই কম। এছাড়া মানুষের মাঝে গোলপাতার চাহিদা কম, রাজস্ব বেশী, দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি, পাতা কাটার জন্য সময় মতো কাজের লোকের পারিশ্রমিক বেশী। তাই এবছর নৌকার সংখ্যাও কম।
তারা আরো বলেন, নতুন করে সুন্দরবনে ডাকাতের উৎপাত বেড়েছে। যা আয় করি তার বেশীর ভাগই বিভিন্ন ভাবে খরচ হয়ে যায়। আরা দীর্ঘদিন পর সুন্দরবনে নয়ন বাহিনী নামের নতুন করে একটি বনদস্য বাহিনী সুন্দরবনে দাপিয়ে বেরাচ্ছে। এ জন্য জেলে বাওয়ালীরা পুনরায় আতঙ্কিত হয়ে পরছে। তার পরেও জীবিকার তাগিদে পরিবার পরিজন ফেলে গোলপাতা আহরণের জন্য সুন্দরবনে যেতে হচ্ছে এসকল অসহায় গোলপাতা আহরণকারীদের। তাই গোলপাতা আহরণ মৌসুমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বনদস্যু সহ সার্বিক নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন বাওয়ালিরা।
পুর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের উদ্ভিদজাতীয় বনজ সম্পদ গোলপাতা। বনের অভ্যন্তরের নদী ও খালের পাড়ে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে প্রচুর পরিমাণ গোলগাছ। জানুয়ারীর শেষ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত গোলপাতা আহরণ মৌসুম। প্রতিবছর এই মৌসুমে বাগেরহাট সহ বিভিন্ন রেঞ্জে বাওয়ালীদের গোলপাতা আহরণ, পরিবহন ও বিক্রির কাজ করেন। চলতি মৌসুমে চাঁদপাই রেঞ্জের দুইটি কূপ থেকে ৭ হাজার কুইন্টাল (১৭ হাজার ৫শ মন) গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মাসে প্রথম দিকে বাওয়ালীরা পাশ নেয়ার কথা ছিল কিন্ত এবার অনেক দেরি করে পাস নিয়েছেন। এতে তাঁদের গোলপাতা সংগ্রহের পরিমাণ কম হবে। এই কারণে লক্ষমাত্রার রাজস্ব আদায়ও কম হওয়ার সম্ভাবনা। তার পরেও এ বছর রাজস্ব আদায় ও লক্ষ্যমাত্রার অর্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বন বিভাগ বলে জানায় তিনি।