১২:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উচ্ছেদ আতঙ্কে রাজবাড়ীর হরিজনরা

রেল লাইনের পাশে গড়ে ওঠা হরিজনদের নিজস্ব কোন জায়গা নেই। ছোট্ট ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মা-বাবা বৌ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস। চিকিৎসা, শিক্ষার সু ব্যবস্থা নেই। আগে বিভিন্ন দপ্তরে হরিজনদের নিদিষ্ট কাজের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে এখন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন কাজ করে।

ব্রিটিশ আমলে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, রাজস্থান, মাদ্রাজ ও আসাম থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজের জন্য অনেক নারী-পুরুষ এদেশে এসেছিল। তাদের কর্মদক্ষতা ও সহজ সরল মন মানসিকতার কারণে দ্রুতই এদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় তারা। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি, রেল স্টেশনসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করতে শুরু করে এসব নারী পুরুষ। মুলত রেলের প্রয়োজনেই রেল এলাকায় গড়ে উঠেছে কাদের বসত।

শহরের ময়লা আর্বজনা পরিস্কার করা এই সসম্প্রদায় মূলত হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় হিসেবেই এরা পরিচিত। পৃথিবী এগিয়ে গেলেও দুঃখের বিষয় শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া এসব হরিজন এখন নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে আতঙ্কে আছে।

জানা যায়, রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন কলোনিতে ব্রিটিশ থেকে বসবাস করে আসছে হিন্দু হরিজন সম্প্রদায়ের প্রায় ১২০ টি পরিবারের প্রায় ৫০০শ লোকজন। রাজবাড়ী রেললাইন উন্নয়নে প্রকল্পের জন্য উচ্ছেদ হতে পারে এই কলোনিটি। এতে হুমকির মুখে রয়েছে হরিজনদের শত বছরের পুরোনো এই আশ্রয়স্থল।

রাজবাড়ী রেলওয়ে কলোনির হরিজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেশাগত কারণে সমাজের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণে; তারা যে কোনো জায়গাতে ইচ্ছা করলেই বসবাস করতে পারে না। তাই তাদের দাবি, পুনর্বাসন করে তাদের যেন এখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়। পুনর্বাসন না করে এখন যদি উচ্ছেদ করা হয়, তাহলে তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। তাই যদি তাদের বিষয়ে সরকার একটু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ভালো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হরিজন সম্প্রদায়ের এক যুবক বলেন, যদি এখান থেকে আমাদের সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আমরা কই যাব? কোনো রকম পুনর্বাসন না করেই আমাদের উচ্ছেদ করাটা অন্যায় হবে। শুনেছি রাজবাড়ী রেলের বড় বড় অফিস এবং লোকো কারখানার জন্য জায়গা দরকার সরকারের তো অনেক জায়গা। তারা ইচ্ছে করলে আমাদেন জায়গা দিতে পারে। আমরা এ দেশের নাগরিক আমাদের জন্ম এখানে। সরকার যখন কাউকে গৃহহীন রাখবে না ঘোষণা দিয়েছেন তখন আমাদের উচ্ছেদ করা হবে কেন? আমরা আশা করছি আমাদের জন্যও এরকম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিবেকানন্দপল্লী রেলওয়ে জায়গা থেকে হরিজনদের উচ্ছেদ না করার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হরিজন ঐক্য পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি বাসুদেব মন্ডল, সাবেক সভাপতি রবিলাল, সহ-সভাপতি উত্তম হেলা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক শিবু সরকার, সদস্য অরুন কুমার সরকার, ওয়ার্কার্স পার্টি রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি জ্যোতি শংকর ঝন্টু, কবি নেহাল আহমেদ ও সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তী প্রমুখ।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

উচ্ছেদ আতঙ্কে রাজবাড়ীর হরিজনরা

Update Time : ০৫:০৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ জুন ২০২৩

রেল লাইনের পাশে গড়ে ওঠা হরিজনদের নিজস্ব কোন জায়গা নেই। ছোট্ট ঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মা-বাবা বৌ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস। চিকিৎসা, শিক্ষার সু ব্যবস্থা নেই। আগে বিভিন্ন দপ্তরে হরিজনদের নিদিষ্ট কাজের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে এখন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন কাজ করে।

ব্রিটিশ আমলে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ, রাজস্থান, মাদ্রাজ ও আসাম থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজের জন্য অনেক নারী-পুরুষ এদেশে এসেছিল। তাদের কর্মদক্ষতা ও সহজ সরল মন মানসিকতার কারণে দ্রুতই এদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় তারা। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি, রেল স্টেশনসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করতে শুরু করে এসব নারী পুরুষ। মুলত রেলের প্রয়োজনেই রেল এলাকায় গড়ে উঠেছে কাদের বসত।

শহরের ময়লা আর্বজনা পরিস্কার করা এই সসম্প্রদায় মূলত হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় হিসেবেই এরা পরিচিত। পৃথিবী এগিয়ে গেলেও দুঃখের বিষয় শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া এসব হরিজন এখন নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে আতঙ্কে আছে।

জানা যায়, রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন কলোনিতে ব্রিটিশ থেকে বসবাস করে আসছে হিন্দু হরিজন সম্প্রদায়ের প্রায় ১২০ টি পরিবারের প্রায় ৫০০শ লোকজন। রাজবাড়ী রেললাইন উন্নয়নে প্রকল্পের জন্য উচ্ছেদ হতে পারে এই কলোনিটি। এতে হুমকির মুখে রয়েছে হরিজনদের শত বছরের পুরোনো এই আশ্রয়স্থল।

রাজবাড়ী রেলওয়ে কলোনির হরিজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেশাগত কারণে সমাজের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার কারণে; তারা যে কোনো জায়গাতে ইচ্ছা করলেই বসবাস করতে পারে না। তাই তাদের দাবি, পুনর্বাসন করে তাদের যেন এখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়। পুনর্বাসন না করে এখন যদি উচ্ছেদ করা হয়, তাহলে তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। তাই যদি তাদের বিষয়ে সরকার একটু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ভালো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হরিজন সম্প্রদায়ের এক যুবক বলেন, যদি এখান থেকে আমাদের সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আমরা কই যাব? কোনো রকম পুনর্বাসন না করেই আমাদের উচ্ছেদ করাটা অন্যায় হবে। শুনেছি রাজবাড়ী রেলের বড় বড় অফিস এবং লোকো কারখানার জন্য জায়গা দরকার সরকারের তো অনেক জায়গা। তারা ইচ্ছে করলে আমাদেন জায়গা দিতে পারে। আমরা এ দেশের নাগরিক আমাদের জন্ম এখানে। সরকার যখন কাউকে গৃহহীন রাখবে না ঘোষণা দিয়েছেন তখন আমাদের উচ্ছেদ করা হবে কেন? আমরা আশা করছি আমাদের জন্যও এরকম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিবেকানন্দপল্লী রেলওয়ে জায়গা থেকে হরিজনদের উচ্ছেদ না করার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন হরিজন ঐক্য পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি বাসুদেব মন্ডল, সাবেক সভাপতি রবিলাল, সহ-সভাপতি উত্তম হেলা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক শিবু সরকার, সদস্য অরুন কুমার সরকার, ওয়ার্কার্স পার্টি রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি জ্যোতি শংকর ঝন্টু, কবি নেহাল আহমেদ ও সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তী প্রমুখ।