১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাউল শিল্পীকে গ্রাম ছাড়ার হুমকি, ৩ মাতবর গ্রেফতার

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:৩৯:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৭৮ Time View

বগুড়ার শিবগঞ্জে বাউল শিল্পী মেহেদী হাসানের (১৬) মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া ও গ্রাম ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তিন মাতবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে বাউল হাসান বাদী হয়ে তিন মাতবরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পরে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জুড়ি মাঝপাড়া গ্রাম থেকে তিনজনকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতার মাতবররা হলেন- মৃত তোজাম্মেল হোসেন তোতার ছেলে শাফিউল ইসলাম খোকন (৫০), এনামুল হকের ছেলে গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মেজবাউল ইসলাম (৫২) ও মো. বাদশার ছেলে তারেক রহমান (২০)। এছাড়া একই গ্রামের সঞ্জু মিয়ার ছেলে ফজলু মিয়া (৪০) ও মৃত আকবর আলীর ছেলে আবু তাহের (৫৫) পলাতক রয়েছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেনের ছেলে বাউল শিল্পী মেহেদী হাসান এজাহারে উল্লেখ করেন, বাবার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় তিনি ছোটবেলা থেকেই দাদা আলম মণ্ডলের বাড়িতে থাকেন। অর্থাভাবে ৬ষ্ঠ শ্রেণির পর আর পড়শোনা করতে পারেননি। তাই বাউল গান শেখার জন্য শিল্পী মতিয়ার রহমান মতিন বাউলের সাথে চলাফেরা করেন। তাকে অনুসরণ করে বড় চুল (বাবরি) রাখেন এবং অধিকাংশ সময় সাদা রঙের গামছা, ফতুয়া ও লুঙ্গি পরিধান করেন।

গান শেখার জন্য ওস্তাদ মতিন বাউলের সাথে বিভিন্ন স্থানে যান ও সেখানে গান পরিবেশন করেন। ওই সব অনুষ্ঠানে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অধিকাংশ সময় সাদা পোশাক পরিধান ও বাউল গান করায় আসামিরা তাকে এবং ওস্তাদদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করতেন।

বাউল মেহেদী হাসান তাদের এমন আচরণের প্রতিবাদ করায় মাতবররা তার ওপর ক্ষিপ্ত হন। এ জের ধরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে আসামিরা তার দাদার বাড়িতে নিজ শয়ন ঘরে প্রবেশ করে। পরে খোকনের হুকুমে তাহের ও মেজবা তাকে আটকে রাখেন এবং তারেক ও ফজলু মেশিন দিয়ে তার মাথা ন্যাড়া করে দেন।

এতে বাউল হাসান চিৎকার করলে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় ফজলু মিয়া বিছানায় বালিশের নিচ থেকে তার দেড় হাজার টাকা চুরি করে। বাউলের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তারা বাউল গান বন্ধ করতে বলে তাকে পিটিয়ে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেয়।

বাউল মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, তাকে সমাজে হেয় ও তিনি যেন বাউল সংগীত পরিবেশনের জন্য কোথাও যেতে না পারেন সেজন্য তার মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুরে আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

বাউল শিল্পীকে গ্রাম ছাড়ার হুমকি, ৩ মাতবর গ্রেফতার

Update Time : ১০:৩৯:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

বগুড়ার শিবগঞ্জে বাউল শিল্পী মেহেদী হাসানের (১৬) মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া ও গ্রাম ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তিন মাতবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে বাউল হাসান বাদী হয়ে তিন মাতবরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পরে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জুড়ি মাঝপাড়া গ্রাম থেকে তিনজনকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতার মাতবররা হলেন- মৃত তোজাম্মেল হোসেন তোতার ছেলে শাফিউল ইসলাম খোকন (৫০), এনামুল হকের ছেলে গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মেজবাউল ইসলাম (৫২) ও মো. বাদশার ছেলে তারেক রহমান (২০)। এছাড়া একই গ্রামের সঞ্জু মিয়ার ছেলে ফজলু মিয়া (৪০) ও মৃত আকবর আলীর ছেলে আবু তাহের (৫৫) পলাতক রয়েছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেনের ছেলে বাউল শিল্পী মেহেদী হাসান এজাহারে উল্লেখ করেন, বাবার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় তিনি ছোটবেলা থেকেই দাদা আলম মণ্ডলের বাড়িতে থাকেন। অর্থাভাবে ৬ষ্ঠ শ্রেণির পর আর পড়শোনা করতে পারেননি। তাই বাউল গান শেখার জন্য শিল্পী মতিয়ার রহমান মতিন বাউলের সাথে চলাফেরা করেন। তাকে অনুসরণ করে বড় চুল (বাবরি) রাখেন এবং অধিকাংশ সময় সাদা রঙের গামছা, ফতুয়া ও লুঙ্গি পরিধান করেন।

গান শেখার জন্য ওস্তাদ মতিন বাউলের সাথে বিভিন্ন স্থানে যান ও সেখানে গান পরিবেশন করেন। ওই সব অনুষ্ঠানে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অধিকাংশ সময় সাদা পোশাক পরিধান ও বাউল গান করায় আসামিরা তাকে এবং ওস্তাদদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করতেন।

বাউল মেহেদী হাসান তাদের এমন আচরণের প্রতিবাদ করায় মাতবররা তার ওপর ক্ষিপ্ত হন। এ জের ধরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে আসামিরা তার দাদার বাড়িতে নিজ শয়ন ঘরে প্রবেশ করে। পরে খোকনের হুকুমে তাহের ও মেজবা তাকে আটকে রাখেন এবং তারেক ও ফজলু মেশিন দিয়ে তার মাথা ন্যাড়া করে দেন।

এতে বাউল হাসান চিৎকার করলে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় ফজলু মিয়া বিছানায় বালিশের নিচ থেকে তার দেড় হাজার টাকা চুরি করে। বাউলের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তারা বাউল গান বন্ধ করতে বলে তাকে পিটিয়ে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেয়।

বাউল মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, তাকে সমাজে হেয় ও তিনি যেন বাউল সংগীত পরিবেশনের জন্য কোথাও যেতে না পারেন সেজন্য তার মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুরে আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।