১১:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেবাপ্রার্থী নারীর ফরম ছুড়ে ফেললেন ইউএনও, দিলেন গালাগালি

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:৪৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৬৬ Time View

একজন নারী সেবাপ্রার্থীর জন্মনিবন্ধন সংশোধনী ফরম তার মুখের ওপর ছুড়ে মারাসহ অশ্লীল ভাষায় গালাগালির অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহা. জানে আলমের বিরুদ্ধে।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওই নারী সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে তার বিদেশপড়ুয়া ছেলে ছিলেন। ঘটনার সময় কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যানও তাদের গালাগালি দেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগে জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌরসভার তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে জন্মনিবন্ধন সংশোধনী ফরমটি উত্তোলন ও পূরণ করে বুধবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান নারী সেবাপ্রার্থী ও তার ছেলে। তাদের সহায়তা করছিলেন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংশোধনীর ক্ষমতা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মহিষালবাড়ি মহল্লায় নিবন্ধন হওয়া নারীর নাম জিয়াসমিন আরা (৪০)। বাবার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন। মাতার নাম নুর মহল আবেদিন। স্বামী রফিকুল আলম দুবাইপ্রবাসী। জিয়াসমিন আরার জন্মনিবন্ধনে তার মাতার নামটি ভুলক্রমে নুর মহল বেগম হয়েছে। তা সংশোধন করে নুর মহল আবেদিন করার জন্যই ওই নারী গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার প্রকৌশলে অধ্যয়নরত ছেলে আব্দুল্লাহ আল  জাহিদ।

ঘটনা সম্পর্কে জাহিদ  বলেন, তিনি ও তার মা ফরমটি ইউএনও সাহেবকে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার আবেদন করেন। একই সময়ে ইউএনওর দপ্তরে বসা উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম  কথা বলছিলেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবকে একটু থামতে অনুরোধ করেন যাতে তারা তাদের কথা শেষ করে বেরিয়ে যেতে পারেন। থামতে বলায় উপজেলা চেয়ারম্যান তার ওপর ভীষণ ক্ষেপে উঠেন। তাদের গালাগালি দিতে শুরু করেন খারাপ ভাষায়।

তিনি বলেন, এরপরই উপজেলা নির্বাহী অফিসারও ক্ষেপে উঠেন। আমাকে ও আমার মাকে কটূ ভাষায় হুমকি ও গালাগালি দিতে থাকেন। আমি এসবের প্রতিবাদ করি। এতে ইউএনও আরও ক্ষেপে যান এবং দপ্তর থেকে তখনই না বেরুলে হাত-পা ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দেন। একপর্যায়ে ইউএনও সাহেব ফরমটি কুচিমুচি করে আমার মায়ের মুখের ওপর ছুড়ে দেন। তবে তা গিয়ে পড়ে সঙ্গে থাকা ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামের মুখের ওপর। এরপর আমরা বেরিয়ে আসি। আমরা বেরিয়ে আসার সময়ও ইউএনও সাহেব অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দিচ্ছিলেন। আমাদের সঙ্গে কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামও ইউএনওর কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং আমাদের সান্ত্বনা দেন।

একজন সেবাপ্রার্থী ও তার  সন্তানের সঙ্গে এমন অসদাচরণ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. জানে আলম  বলেন, তেমন ঘটনা ঘটেনি, যেমনটি আপনারা শুনেছেন। ফরম ছুড়ে দেওয়া হয়নি। তবে তাদের সঙ্গে কিছু কথাকাটাকাটি হয়েছে। ঘটনার সময় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেক অফিসার উপস্থিত ছিলেন। সেবাপ্রার্থী ও তার ছেলে বাড়িয়ে বলছেন।

ইউএনওর বক্তব্য প্রসঙ্গে সেবাপ্রার্থী নারীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল জাহিদ আরও বলেন, একজন ইউএনও যেসব ভাষা প্রয়োগ করেছেন তা কোনো ভদ্রলোকই মুখ দিয়ে বলতে পারেন না। উনার আচরণও ছিল ভীষণ আক্রমণাত্মক। আমি সেসব ভাষা মুখে বলতে পারছি না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

সেবাপ্রার্থী নারীর ফরম ছুড়ে ফেললেন ইউএনও, দিলেন গালাগালি

Update Time : ১০:৪৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

একজন নারী সেবাপ্রার্থীর জন্মনিবন্ধন সংশোধনী ফরম তার মুখের ওপর ছুড়ে মারাসহ অশ্লীল ভাষায় গালাগালির অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহা. জানে আলমের বিরুদ্ধে।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওই নারী সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে তার বিদেশপড়ুয়া ছেলে ছিলেন। ঘটনার সময় কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যানও তাদের গালাগালি দেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগে জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌরসভার তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে জন্মনিবন্ধন সংশোধনী ফরমটি উত্তোলন ও পূরণ করে বুধবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান নারী সেবাপ্রার্থী ও তার ছেলে। তাদের সহায়তা করছিলেন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংশোধনীর ক্ষমতা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মহিষালবাড়ি মহল্লায় নিবন্ধন হওয়া নারীর নাম জিয়াসমিন আরা (৪০)। বাবার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন। মাতার নাম নুর মহল আবেদিন। স্বামী রফিকুল আলম দুবাইপ্রবাসী। জিয়াসমিন আরার জন্মনিবন্ধনে তার মাতার নামটি ভুলক্রমে নুর মহল বেগম হয়েছে। তা সংশোধন করে নুর মহল আবেদিন করার জন্যই ওই নারী গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার প্রকৌশলে অধ্যয়নরত ছেলে আব্দুল্লাহ আল  জাহিদ।

ঘটনা সম্পর্কে জাহিদ  বলেন, তিনি ও তার মা ফরমটি ইউএনও সাহেবকে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার আবেদন করেন। একই সময়ে ইউএনওর দপ্তরে বসা উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম  কথা বলছিলেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবকে একটু থামতে অনুরোধ করেন যাতে তারা তাদের কথা শেষ করে বেরিয়ে যেতে পারেন। থামতে বলায় উপজেলা চেয়ারম্যান তার ওপর ভীষণ ক্ষেপে উঠেন। তাদের গালাগালি দিতে শুরু করেন খারাপ ভাষায়।

তিনি বলেন, এরপরই উপজেলা নির্বাহী অফিসারও ক্ষেপে উঠেন। আমাকে ও আমার মাকে কটূ ভাষায় হুমকি ও গালাগালি দিতে থাকেন। আমি এসবের প্রতিবাদ করি। এতে ইউএনও আরও ক্ষেপে যান এবং দপ্তর থেকে তখনই না বেরুলে হাত-পা ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দেন। একপর্যায়ে ইউএনও সাহেব ফরমটি কুচিমুচি করে আমার মায়ের মুখের ওপর ছুড়ে দেন। তবে তা গিয়ে পড়ে সঙ্গে থাকা ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামের মুখের ওপর। এরপর আমরা বেরিয়ে আসি। আমরা বেরিয়ে আসার সময়ও ইউএনও সাহেব অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দিচ্ছিলেন। আমাদের সঙ্গে কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামও ইউএনওর কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং আমাদের সান্ত্বনা দেন।

একজন সেবাপ্রার্থী ও তার  সন্তানের সঙ্গে এমন অসদাচরণ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. জানে আলম  বলেন, তেমন ঘটনা ঘটেনি, যেমনটি আপনারা শুনেছেন। ফরম ছুড়ে দেওয়া হয়নি। তবে তাদের সঙ্গে কিছু কথাকাটাকাটি হয়েছে। ঘটনার সময় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেক অফিসার উপস্থিত ছিলেন। সেবাপ্রার্থী ও তার ছেলে বাড়িয়ে বলছেন।

ইউএনওর বক্তব্য প্রসঙ্গে সেবাপ্রার্থী নারীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল জাহিদ আরও বলেন, একজন ইউএনও যেসব ভাষা প্রয়োগ করেছেন তা কোনো ভদ্রলোকই মুখ দিয়ে বলতে পারেন না। উনার আচরণও ছিল ভীষণ আক্রমণাত্মক। আমি সেসব ভাষা মুখে বলতে পারছি না।