০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ মানিকগঞ্জের তেরশ্রী ট্র্যাজেডি দিবস পালিত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:০৭:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ নভেম্বর ২০২১
  • ১৩৮ Time View

২২ নভেম্বর মানিকগঞ্জবাসির কাছে এক কলঙ্কিত দিন। ১৯৭১ সনে এই দিনে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তেরশ্রীতে নিরিহ বাঙ্গালীর ওপর এদেশের আলবদর, রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী বর্বরোচিত কায়দায় নির্মম ভাবে ৪৩ জন গ্রামবাসীকে নিশংসভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটাই ছিলো মানিকগঞ্জের সবচেয়ে বড় গনহত্যা কান্ড। এই দিনটিতে “ তেরশ্রী ট্রাজেডী দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।
১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর আল বদর,আল সামস এবং রাজাকার বাহিনী তেরশ্রী গ্রামে অভিযান চালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ও পাখির মতো গুলি এবং বেয়নোট চার্জ করে হত্যা করে এ গ্রামের স্বাধীনতাকামী জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী, অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন নিরহ মানুষকে। আজও জেলাবাসী এ ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে। প্রতি বৎসর দিবসটি পালিত হলেও বিচার হয়নি ঘাতকদের।
বর্বর এই হত্যাকান্ডের বিচার না পাওয়া মানুষের দীর্ঘশ্বাস এখনো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটারের উত্তরে তেরশ্রী বাজার,তেরশ্রী গ্রাম, সেন পাড়া,বড়রিয়া ও বড়বিলা এক শান্ত গ্রাম কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে ধরা হতো।
পল্লী গ্রাম হলেও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে যথেষ্ট সক্রীয়তা ছিল এ গ্রামবাসির। সচেতন গ্রামবাসির কারনে এ গ্রামে গড়ে উঠেছিল মানিকগঞ্জ জেলার প্রথম কলেজ। আর এ কলেজকে কেন্দ্র করে পশ্চাৎতপদ চেতনার কিছু অপশক্তির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগীতায় বিভেদ সৃষ্ঠি করা হয়। এই প্রতিহিংসারই চরিতার্থ করে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর। জামাত, শিবির, রাজাকার, আলবদর, আলসামস, পিচ কমিটির –পিচাশরা, হানাদার বাহিনীর সর্বাত্বক সহযোগীতা নিয়ে শীতের কুয়াশা ঘেরা ঘুমন্ত পল্লীত চালায় ৬ ঘন্টার নারকীয় হত্যাযঞ্জ, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় গ্রাম থেকে গ্রাম ।
এই হত্যা কান্ডের সাথে অনেকই জড়িত ছিল। তাদের অনেকেই আজও জীবিত আছেন। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় বর্তমানে ভালই আছেন।
এদিকে এই দিবসকে ঘিরে তেরশ্রী গ্রামে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে গনহত্যা দিবস পালিত হয়। আজও জেলাবাসী এক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে। প্রতি বৎসর দিবসটি পালিত হলেও বিচার হয়নি ঘাতকদের। শহীদদের স্মরনে এলজিইডি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান করেছে।
শহীদ পরিবারের সদস্য সোমেশ^র প্রসাদ রায় চৌধুরীকে করা হয়েছে শহীদ স্মৃতি সংসদের আহবায়ক। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ সকালে আনুষ্টানিক ভাবে শহীদদের স্মৃতিতে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পন করেন। এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে সকালে ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা, জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এই দিবস পালন করে। পরে নিহত শহীদদের স্বরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে মুক্তিযোদ্ধা,জেলা-উপজেলা প্রশাসন,রাজনৈতিক ও নেতা-কর্মীসহ স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

আজ মানিকগঞ্জের তেরশ্রী ট্র্যাজেডি দিবস পালিত

Update Time : ০৪:০৭:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ নভেম্বর ২০২১

২২ নভেম্বর মানিকগঞ্জবাসির কাছে এক কলঙ্কিত দিন। ১৯৭১ সনে এই দিনে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তেরশ্রীতে নিরিহ বাঙ্গালীর ওপর এদেশের আলবদর, রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী বর্বরোচিত কায়দায় নির্মম ভাবে ৪৩ জন গ্রামবাসীকে নিশংসভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটাই ছিলো মানিকগঞ্জের সবচেয়ে বড় গনহত্যা কান্ড। এই দিনটিতে “ তেরশ্রী ট্রাজেডী দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।
১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর আল বদর,আল সামস এবং রাজাকার বাহিনী তেরশ্রী গ্রামে অভিযান চালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ও পাখির মতো গুলি এবং বেয়নোট চার্জ করে হত্যা করে এ গ্রামের স্বাধীনতাকামী জমিদার সিদ্ধেশ্বর প্রসাদ রায় চৌধুরী, অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন নিরহ মানুষকে। আজও জেলাবাসী এ ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে। প্রতি বৎসর দিবসটি পালিত হলেও বিচার হয়নি ঘাতকদের।
বর্বর এই হত্যাকান্ডের বিচার না পাওয়া মানুষের দীর্ঘশ্বাস এখনো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটারের উত্তরে তেরশ্রী বাজার,তেরশ্রী গ্রাম, সেন পাড়া,বড়রিয়া ও বড়বিলা এক শান্ত গ্রাম কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে ধরা হতো।
পল্লী গ্রাম হলেও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে যথেষ্ট সক্রীয়তা ছিল এ গ্রামবাসির। সচেতন গ্রামবাসির কারনে এ গ্রামে গড়ে উঠেছিল মানিকগঞ্জ জেলার প্রথম কলেজ। আর এ কলেজকে কেন্দ্র করে পশ্চাৎতপদ চেতনার কিছু অপশক্তির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগীতায় বিভেদ সৃষ্ঠি করা হয়। এই প্রতিহিংসারই চরিতার্থ করে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর। জামাত, শিবির, রাজাকার, আলবদর, আলসামস, পিচ কমিটির –পিচাশরা, হানাদার বাহিনীর সর্বাত্বক সহযোগীতা নিয়ে শীতের কুয়াশা ঘেরা ঘুমন্ত পল্লীত চালায় ৬ ঘন্টার নারকীয় হত্যাযঞ্জ, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় গ্রাম থেকে গ্রাম ।
এই হত্যা কান্ডের সাথে অনেকই জড়িত ছিল। তাদের অনেকেই আজও জীবিত আছেন। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় বর্তমানে ভালই আছেন।
এদিকে এই দিবসকে ঘিরে তেরশ্রী গ্রামে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে গনহত্যা দিবস পালিত হয়। আজও জেলাবাসী এক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে। প্রতি বৎসর দিবসটি পালিত হলেও বিচার হয়নি ঘাতকদের। শহীদদের স্মরনে এলজিইডি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান করেছে।
শহীদ পরিবারের সদস্য সোমেশ^র প্রসাদ রায় চৌধুরীকে করা হয়েছে শহীদ স্মৃতি সংসদের আহবায়ক। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ সকালে আনুষ্টানিক ভাবে শহীদদের স্মৃতিতে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পন করেন। এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে সকালে ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা, জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এই দিবস পালন করে। পরে নিহত শহীদদের স্বরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে মুক্তিযোদ্ধা,জেলা-উপজেলা প্রশাসন,রাজনৈতিক ও নেতা-কর্মীসহ স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানায়।