০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ বিশ্ব এইডস দিবস: এইডস ঝুঁকিতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ৫ হাজার বাসিন্দা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:০২:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১৭২ Time View
আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এইডস ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ  গোয়ালন্দ উপজেলাধীন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রায়  ৫ হাজার বাসিন্দা। তবে মরনঘাতি এ রোগ নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন কোন উৎকণ্ঠা নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে তালিকাভুক্ত যৌনকর্মীর সংখ্যা দেড় হাজারের অধিক । এ ছাড়া যৌনজীবীদের বাবু, বাড়ীওয়ালী, যৌনজীবীদের শিশু, বয়স্ক নারী ও নানাবিধ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস এ পল্লীতে। এরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এইচআইভি এইডস সহ নানাবিধ যৌনরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সূত্রমতে, যৌনপল্লীতে আসা বেশীর ভাগ লোকজন দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারের ব্যাপারে অনাগ্রহী থাকে। খদ্দেরের ইচ্ছা ও বেশী টাকার লোভে বেশীর ভাগ মেয়ে প্রতিনিয়ত অনিরাপদ মিলন করে থাকে। এ ছাড়া পল্লীর বহু মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তাদের আয়-রোজগার কম। নেশার টাকা যোগানো, খাবার ও ঘর ভাড়ার টাকা যোগাতে এ সকল মেয়েরা দৈহিক মিলনে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করার সুযোগ পায় না। এছাড়া কিছু মেয়ে রয়েছে বাড়ীওয়ালীদের কাছে জিম্মি। স্থানীয়ভাবে তাদেরকে ছুকরি বলা হয়। দৈহিক মিলনে এদেরও নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবার সুযোগ নেই। উপরন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে পল্লীতে খদ্দের আসা কমে যাওয়ায় যৌনকর্মীরা যে কোন উপায়ে খদ্দের টানতে মরিয়া থাকে।
সরেজমিন যৌনপল্লীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় একযুগ পর গত বছরের মে মাস হতে বেসরকারি সংগঠন পায়াক্ট বাংলাদেশ এইচআইভি এইডস ও যৌনরোগ নিয়ে ২ বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া গনস্বাস্হ্য কেন্দ্র হাসপাতালের মাধ্যমে  যৌনপল্লী বাসীদের  মধ্যে নানাবিধ রোগের চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
পায়াক্ট বাংলাদেশ এর দৌলতদিয়া শাখার ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান জুয়েল জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে তারা এখানে এইচআইভি এইডসসহ বিভিন্ন যৌনরোগ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা ধরণের কাজ করছেন। এ কাজে তাদের ২ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও একদল সহযোগী সদস্য রয়েছেন। তারা নিয়মিত যৌনরোগের সনাক্তকরন,বিনামুল্যে ঔষুধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং সচেতনতা বাড়াতে নানাবিধ কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কর্মসুচীর অংশ হিসেবে তারা এ পর্যন্ত দেড় হাজার মেয়ের নমুনা সংগ্রহ করে এইডস পরিক্ষা করেছেন। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে একটি মেয়ের পজিটিভ হয়েছে।তবে চূড়ান্ত পজিটিভ প্রমানের জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে আরো দুটি পরিক্ষা করা হবে।আপাতত আমরা সংস্হার পক্ষ হতে তাকে সুরক্ষিত অবস্থায় রেখে তার ভরনপোষণ চালাচ্ছি।
 এ ছাড়াও প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রতি মাসে যৌনজীবীদের মাঝে প্রায় দেড় থেকে পৌণে ২ লক্ষ কনডম বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে ।
তবে যৌনজীবীদের নানাবিধ ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তাদের কর্মসুচীগুলোর সুফল পেতে অনেক ক্ষেত্রে বেগ পেতে হচ্ছে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তারা তাদের চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের মধ্যে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন।তবে আগামী জুনে এ প্রকল্প শেষ হয়ে যাবে। তখন হয়তো মনিটরিং ও বিনামূল্যের সে না পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে আবারো সবকিছু পূর্বের অবস্হায় ফিরে যাবে।তিনি এ ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন,
যৌনপল্লীতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের কাজের নিয়মিত মনিটরিং ছাড়াও বিভিন্ন জটিল ও সন্দেহজনক রোগী তাদের কাছে আসলে তারা চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ফিনল্যান্ড 5 বছরের কাজের ভিসা | ফিনল্যান্ডে দক্ষ এবং অদক্ষ চাকরি নিয়োগ এপ্রিল-মে 2024 এখনি এপ্লাই করুন.

আজ বিশ্ব এইডস দিবস: এইডস ঝুঁকিতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ৫ হাজার বাসিন্দা

Update Time : ০৪:০২:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১
আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এইডস ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ  গোয়ালন্দ উপজেলাধীন দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রায়  ৫ হাজার বাসিন্দা। তবে মরনঘাতি এ রোগ নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন কোন উৎকণ্ঠা নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে তালিকাভুক্ত যৌনকর্মীর সংখ্যা দেড় হাজারের অধিক । এ ছাড়া যৌনজীবীদের বাবু, বাড়ীওয়ালী, যৌনজীবীদের শিশু, বয়স্ক নারী ও নানাবিধ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস এ পল্লীতে। এরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এইচআইভি এইডস সহ নানাবিধ যৌনরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সূত্রমতে, যৌনপল্লীতে আসা বেশীর ভাগ লোকজন দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারের ব্যাপারে অনাগ্রহী থাকে। খদ্দেরের ইচ্ছা ও বেশী টাকার লোভে বেশীর ভাগ মেয়ে প্রতিনিয়ত অনিরাপদ মিলন করে থাকে। এ ছাড়া পল্লীর বহু মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তাদের আয়-রোজগার কম। নেশার টাকা যোগানো, খাবার ও ঘর ভাড়ার টাকা যোগাতে এ সকল মেয়েরা দৈহিক মিলনে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করার সুযোগ পায় না। এছাড়া কিছু মেয়ে রয়েছে বাড়ীওয়ালীদের কাছে জিম্মি। স্থানীয়ভাবে তাদেরকে ছুকরি বলা হয়। দৈহিক মিলনে এদেরও নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবার সুযোগ নেই। উপরন্তু এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে পল্লীতে খদ্দের আসা কমে যাওয়ায় যৌনকর্মীরা যে কোন উপায়ে খদ্দের টানতে মরিয়া থাকে।
সরেজমিন যৌনপল্লীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় একযুগ পর গত বছরের মে মাস হতে বেসরকারি সংগঠন পায়াক্ট বাংলাদেশ এইচআইভি এইডস ও যৌনরোগ নিয়ে ২ বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া গনস্বাস্হ্য কেন্দ্র হাসপাতালের মাধ্যমে  যৌনপল্লী বাসীদের  মধ্যে নানাবিধ রোগের চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
পায়াক্ট বাংলাদেশ এর দৌলতদিয়া শাখার ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান জুয়েল জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে তারা এখানে এইচআইভি এইডসসহ বিভিন্ন যৌনরোগ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা ধরণের কাজ করছেন। এ কাজে তাদের ২ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও একদল সহযোগী সদস্য রয়েছেন। তারা নিয়মিত যৌনরোগের সনাক্তকরন,বিনামুল্যে ঔষুধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং সচেতনতা বাড়াতে নানাবিধ কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কর্মসুচীর অংশ হিসেবে তারা এ পর্যন্ত দেড় হাজার মেয়ের নমুনা সংগ্রহ করে এইডস পরিক্ষা করেছেন। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে একটি মেয়ের পজিটিভ হয়েছে।তবে চূড়ান্ত পজিটিভ প্রমানের জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে আরো দুটি পরিক্ষা করা হবে।আপাতত আমরা সংস্হার পক্ষ হতে তাকে সুরক্ষিত অবস্থায় রেখে তার ভরনপোষণ চালাচ্ছি।
 এ ছাড়াও প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রতি মাসে যৌনজীবীদের মাঝে প্রায় দেড় থেকে পৌণে ২ লক্ষ কনডম বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে ।
তবে যৌনজীবীদের নানাবিধ ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তাদের কর্মসুচীগুলোর সুফল পেতে অনেক ক্ষেত্রে বেগ পেতে হচ্ছে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তারা তাদের চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের মধ্যে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন।তবে আগামী জুনে এ প্রকল্প শেষ হয়ে যাবে। তখন হয়তো মনিটরিং ও বিনামূল্যের সে না পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে আবারো সবকিছু পূর্বের অবস্হায় ফিরে যাবে।তিনি এ ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন,
যৌনপল্লীতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের কাজের নিয়মিত মনিটরিং ছাড়াও বিভিন্ন জটিল ও সন্দেহজনক রোগী তাদের কাছে আসলে তারা চিকিৎসা সেবা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।